শ্যামল কান্তি থেকে শুরু, বারবার বিতর্কে সেলিম ওসমান!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: ২০১৪ সালের ২৬ জুন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মত বিজয়ী হয়েছিলেন সেলিম ওসমান। পরবর্তিতে গত একাদশ জাতী সংসদ নির্বাচনে ফের মহাজোটের প্রার্থী হয়ে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনরায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ইমিধ্যে নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বন্দরে গত ২৬ অক্টোবর বন্দরের সমরক্ষেত্রে সংবর্ধনায় অংশ নেন সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালে উপ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তির ঘটনা থেকে শুরু করে সর্বশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পর্যন্ত বার বার সমালোচিত হয়েছেন তিনি।

 

এছাড়াও সাংবাদিকদের কলিজা খেয়ে ফেলার হুমকি, স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় পার্টির একাংশ নেতাদের সাথে বিরোধ, বিএনপির নেতাদের সাথে আতাঁত, নাসিম ওসমান পরিবারের সাথে দূরত্ব, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিজের কর্তৃত্বে রাখাসহ বার সমালোচনার মধ্যে পড়েছেন সেলিম ওসমান।

 

২০১৬ সালের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। প্রধান শিক্ষক কান ধরে ওঠবস করছেন, আর সেলিম ওসমান কয়বার তিনি ওঠবস করলেন, তা গুনছেন এমন একটি ভিডিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েলে দেশ জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।

 

তার আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতারা গোপীনাথ দাসকে ধমক দিয়ে কথা বলেন এবং এঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের কলিজা খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। যার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিক মহল সেলিম ওসমানকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল।

 

সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর বন্দরের সমরক্ষেত্রে বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নিজেই সংবর্ধনা নিয়েছেন। যা নিয়ে ফের সমালোচনা চলছে সেলিম ওসমানকে নিয়ে। এঘটনায় অনেকের কাছে হাসির পাত্র হয়েছেন সেলিম ওসমান। নিজেকে দানবীর হিসেবে প্রচার করলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী বিভিন্ন কারণে সেলিম ওসমানের প্রতি নাখোশ। যদিও সেলিম ওসমানের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীগণ।

 

সূত্র বলছে, প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান। অথচ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান ও পুত্র আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন।

 

এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেও বিএনপির কতিপয় নেতাদের সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরই দলীয় কার্যালয় হারিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি। টানা দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও দলীয় কার্যালয় উপহার দিতে পারেনি নেতাকর্মীদের, যা নিয়েও চলছে সমালোচনা।

 

স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও জাতীয় পার্টির একাংশ নেতাদের সাথে বিরোধ, বিএনপির নেতাদের সাথে আতাঁত, শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকা, নাসিম ওসমান পরিবারের সাথে দূরত্ব, শীর্ষ ব্যববসায়ীরা নাখোশসহ নানা কারণে অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

 

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতেও আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে বিনা ভোটে বার বার বিকেএমইএ’র সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এছাড়াও ৩৪টি ব্যবসায়ী সংগঠন একক ভাবে নিয়ন্ত্রন করছেন তিনি। তার অনুসারিরাই সংগঠনগুলো নেতৃত্বে রয়েছেন। সেলিম ওসমানের কথার অবাধ্য হলেওই নেতৃত্ব থেকে আউট করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সেলিম ওসমানের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তবে নানা কারণে সমালোচিত সেলিম ওসমান বার বার প্রভাব বিস্তার করে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ