জেলা বিএনপির ব্যর্থ নেতৃত্বের অবসান

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ব্যর্থ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ঘোষনা করা হয়েছে নতুন আহবায়ক কমিটি। ব্যর্থতার দায় নিয়েই সরে যেতে হলো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদেও নেতৃত্বাধীন কমিটিকে। তিন মাসের এই আহবায়ক কমিটি প্রায় দুই বছর সময় পার করলেও জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি বরং দলের মাঝে বিভক্তি আর বিভাজনের সৃষ্টি করেছেন। বিশেষ করে ১০টি ইউনিট কমিটি অনুমোদন করতে গিয়ে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তারা। দলের ত্যাগী আর পরীক্ষিত নেতাদের মাইনাস করে সরকারী দলের সাথে আঁতাত করা নেতাদেরকে পদায়নের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে। জেলা বিএনপিতে পদ বানিজ্যের মাষ্টারসমাইন্ড বিবেচনা করা হচ্ছে তাকে। তার সহযোগী হিসেবে প্রথমে এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও পরে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নাসিরউদ্দিন সর্বনাশের ঘোলকলা পূর্ন করেন।

জানা যায়, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহবায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন হয়েছিলো তিনমাসের জন্যে। কথা ছিলো তিনমাসের মধ্যে এই কমিটি সকল ইউনিট কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপির সম্মেলন আয়োজন করবে। কমিটি ঘোষনার পর থেকে তৈমূর আর মামুন মিলে শুরু করেন কমিিিট বানিজ্য। টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের পদ দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তারা।

এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলে আসে। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হন জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকার। এই অপরাধে প্রথমে তাকে জেলা বিএনপির আহবায়ক পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে তাকে বিএনপির সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। তৈমূরের বহিস্কারে জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে নাসিক নির্বাচনের আগমুহুর্তে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে হেফাজতের মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন ২য় যুগ্ম আহবায়ক নাসিরউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দাত্বি তুলে দেওয়য়া হয়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নাসিরউদ্দিন ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুুন মাহমুদ মিলে গত ২০ জানুয়ারি জেলা বিএনপির আওতাধীন ১০টি ইউনিট কমিটির অনুুমোদন দেন। এই ইউনিট কমিটি অনুমোদন নিয়েও সমালোচনা ঝড় উঠে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের পদায়ন করা হয়েছে আর মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের করা হয়েছে বঞ্চিত। অনেকে বলে থাকেন মামুন মাহমুুদ আর নাসিরউদ্দিন যোগসাজস করেই মনিরুল ইসলাম রবিকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যাতে করে তারা নির্বিঘ্নে টাকার বিনিময়ে ইউনিট কমিটিগুলো বিক্রি করতে পারেন।

তৃণমূলের দাবি, যারা বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির জন্য জেল জুলম অত্যাচার সহ্য করে এখনও দলের হয়ে কাজ করছেন তেমন নেতাদের মাইনাস করে আওয়ামী লীগ পরিবার ও ক্ষমতাসীন এই দলটির জন্য ভোট চাওয়া ব্যক্তিদের থানা ও উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে নিয়ে এসেছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এ নিয়ে দলটির তৃণমূলের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

তৃণমূল বলছে, দলকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে আরও দুর্বল করার চক্রান্তে দুষ্টু চক্রের ভূমিকা পালন করেছেন মামুন মাহমুদ। তিনি নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে এসব কর্মকাণ্ড সংঘটন করছেন বলেও তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগ তুলেন। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে মামুন মাহমুদের কোনো ভিত নেই। এখানকার আলো-বাতাস ও মাটি-মানুষের সঙ্গেও তার সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় গুটি কয়েক নেতার সুবাদে তিনি যুবদলের সভাপতি, পরে জেলা বিএনপির সেক্রটারি এবং বর্তমানে সদস্য সচিব হয়েছেন। এই পদের কোনোটিতে আসার যোগ্যতা তারা নেই। তারপরও তিনি এসেছেন।

সূত্র মতে, যুবদলের সভাপতি থাকাকালিন সময় থেকেই পদ বাণিজ্য শুরু করেন মামুন মাহমুদ। তিনি বিএনপির কর্মী না হয়ে শিল্পপতি শাহ আলমের একনিষ্ঠ কর্মীর ভূমিকা পালন করতে থাকেন। সেসময় তিনি শাহ আলমের এক ইচ্ছেতে দলের শূন্য প্যাডে ফতুল্লা থানা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করেন। এ নিয়ে সেসময় ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন তিনি। শোনা গিয়েছিলো, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই কমিটি দিয়েছিলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালিন সময়ে শাহ আলমের ইচ্ছেতে এক রাতের মধ্যেই ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন মামুন মাহমুদ। এর আহ্বায়ক করা হয় আওয়ামী লীগ ঘেঁষা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে। এ নিয়েও তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরতে হয়েছিলো তাকে।

বিএনপির অনেক নেতাই আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমানে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যেখানে ঠিকমত সংসার চালাতে পারেন না, সেখানে মামুন মাহমুদ দিন দিন ফুলেফেঁপে মোটাতাজা হচ্ছেন। দলের চরম দুর্দিনেও তিনি কয়েক লাখ টাকা খরচ করে গাড়ি কিনেছেন। জেলা ব্এিনপির কশমিটি বানিজ্যের টাকা দিয়ে তিনি রাজকীয় জীবন যাপন করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ