মান্নানের ৩০ লাখের কমিটিতে বিতর্কিত মোশারফ, ক্ষুব্দ সেলিম হক শিবির

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অধীনে থাকা ৫টি থানা ও ৫টি পৌরসভায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদ এ কমিটির অনুমোদন দেন।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি)  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামুন মাহমুদ। এর আগে, বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। ১০টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ৩১ সদস্য বিশিষ্ট করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির নেতৃত্বে পেয়েছেন সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান। তার সাথে রয়েছেন সোনারগাঁ বিএনপি’র বিতর্কিত নেতা মোশারফ হোসেন। অনেকদিন যাবত গুঞ্জন ছিলো মান্নানের সাথে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র নেতৃত্বে আসবেন কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমি। এ লক্ষ্যে তাদের মধ্যকার একসময়ের বিরোধপূর্ণ সম্পর্কের ইতি ঘটেছিলো এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের দুইজনকে একসাথে দেখা যেতো সবসময়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে মান্নানের আস্থা হারান সেলিম হক। বিপরীতে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন সেলিম হকের জায়গা দখল করে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কমিটি নিজের আয়ত্তে রাখতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। এই টাকা ঢাকা বিভাগীয় টিম এবং জেলা বিএনপি’র শীর্ষ দুই নেতা মাঝে বিলিবন্টন হয়েছে। মূলত সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি রেজাউল করিম এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের অনুসারীদের মাইনাস করতেই মান্নানের এতো দৌড়ঝাঁপ।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ বিএনপি’র অলিখিত নিয়ন্ত্রক এখন আজহারুল ইসলাম মান্নান। যদিও একসময় সোনারগাঁ বিএনপিকে শাসন করতেন সাবেক মন্ত্রী রেজাউল করিম ও এরপরে সাবেক উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সংস্কারপন্থী হিসেবে রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রেজাউল করিম। আর দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনীতি থেকে দূরে আছেন আবু জাফর। এই সুযোগে সোনারগাঁ বিএনপির চূড়ায় উঠে বসতে চাইছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান।

সূত্র মতে, বিগত কয়েক বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাছাড়া সোনারগাঁ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক হামলা-মামলা-নির্যাতনে দিশেহারা নেতাকর্মীদের মামলার খরচ এবং পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

শেষ কয়েক বছরে এতকিছু করার কারণে সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মান্নান। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কর্ণধার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি এবং সেই লক্ষ্যে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বাজেট নিয়ে নেমে পড়েন থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিজের হস্তগত করতে। ইতিমধ্যে নিজের পছন্দ মতন লোকদের দিয়ে কমিটি জমা দিয়ে তা অনুমোদনও করিয়ে ফেলেছেন। তবে মান্নানের এই কমিটিতে বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা স্থান পেয়েছেন, যা নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সদস্য সচিব করা হয়েছে যাকে সেই মোশারফ হোসেনকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে।

স্থানীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী বিতর্কিত বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব বানিয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। গত ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এ সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে কোনদিন দেখা মিলেনি মোশাররফের। তাছাড়া পুলিশের মামলা হামলায়ও নাম নেই এই বিএনপি নেতার। মূলত সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে চলায় সকল কিছু থেকে নিরাপদে থেকেছেন তিনি। আর এরকম একজন সুবিধাবাদী নেতাকে সোনারগাঁ বিএনপির নেতৃত্বে নিয়ে আসায় মান্নানের প্রতি ক্ষুব্ধ সোনারগাঁ বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ