নারায়ণগঞ্জে লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতি!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে গুলিতে নিহত শাওন প্রধান ছিলেন মিছিলে অগ্রভাগে। জেলা যুবদল নেতা সাদেকর মিছিলের অগ্রভাগে ছিলো এই শাওন। মিছিলকারীরা যখন নগরীর ডি আই টি এলাকায় এসে জমায়েত হয় ঠিক তখন জেলা যুবদল নেতা সাদেকর মিছিলের একটি ছবিতে দেখা যায় নিহত শাওন কে।

 

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার যখন সংবাদ কর্মীদের জানান নিহত শাওন বিএনপির ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা না সে আওয়ামীলীগের এক নেতার ভাতিজা ঠিক তখনই ছবিটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশেরপর বিষয়টি নিয়ে চলছে সমলোচনার ঝড়।

 

এছাড়াও আসলে কোন দলে সমর্থক বা কর্মী ছিলেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সাড়া শহর জুড়ে। বিএনপি নেতারা শাওনকে যুবদলের কর্মী দাবি করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. শওকত আলীর ভাতিজা। তবে শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধান গনমাধ্যমকে জানায়, তার ভাই কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না৷

 

এদিকে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শাওনের মৃত্যুর পর যুবদল নেতাদের সঙ্গে মিছিলের সামনে থাকা তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ওই দিন সকালে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি আয়োজিত শোভাযাত্রায় পুলিশের সাথে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হলে শাওন গুলিবিদ্ধ হন। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

এ ঘটনায়, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যে ছেলেটি মারা গেছে, সে একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাতিজা। নিহত ব্যক্তি বিএনপির কর্মী, নাকি পথচারী সেটি এখনও তদন্ত চলছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।’

 

এ বিষয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী বলেন, নিহত শাওন প্রধান আমার আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। কাগজে-কলমে সে কোন দল করে না। তবে যেহেতু আমি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, তাই আমি দাবি করতেই পারি সে আওয়ামী লীগেরই সমর্থক।

 

বিএনপির মিছিলে যুবদল নেতাদের সাথে থাকা শাওনের ছবির বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৭ তারিখের মিটিংয়ে শাওন আমার সাথে মিছিলে গিয়েছে। ধরেন, সে যদি ওই মিছিলে গিয়েও থাকে, তার মানে তো এই না যে সে যুবদলের কর্মী।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে শাওনের নাম আছে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ যে দাবি করেছে ওই বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যদি তার নাম জেলা যুবদলের প্রস্তাবিত কমিটিতে থেকে থাকে তা হলে ভালো। আর উনারা যদি তা প্রমান করতে পারে তা হলে তারা করবে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সে অনুযায়ী শাওন আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করে। কিন্তু এর পরেও যদি সে ওই (যুবদল) মিছিলে গিয়ে থাকে তা হলে হয়তো অরাজনৈতিক ভাবে গিয়েছে, নাকি অর্থের বিনিময়ে গিয়েছে তা ঠিক আমি এখন বলতে পারছি না। এমনও হতে পারে অর্থের বিনিময়েও সে যেতে পারে। আমরাও তো মিছিল মিটিংয়ে টাকা খরচ করি।

 

নিহত শাওন বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেক জানান, শাওন প্রধান আমার নেতৃত্বে আজ (বৃহস্পতিবার) বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রায় অংসগ্রহন করেন। এসময় পুলিশের সাথে নেতাকর্মিদের সংঘর্ষ শুরু হলে শাওন গুলিবিদ্ধ হন। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগেও শাওন আমার সাথে ঢাকায় আমাদের কেন্দ্রীয় মিটিংয়ে অংশ নিছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের প্রস্তাবিত কমিটিতেও তার নাম আছে বলে দাবি করেন এই নেতা।

 

এদিকে শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধান একটি গনমাধ্যমকে বলেন, তার ভাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না৷ আজ সকালে স্থানীয় যুবদল নেতাদের ডাকে শাওন শহরে যান। তার কিছুক্ষণ পর তাঁরা জানতে পারেন, শাওন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় ফরহাদ প্রধানের মুঠোফোনে একটি কল আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মামাগো আমার নিরীহ ভাইটারে পুলিশ গুলি কইরা মাইরা ফালাইছে। ওর লাশটা একা হাসপাতালে পইড়া আছে। কেউ নাই ওর লগে। হাজার মানুষের লগে গুলি খাইলো মামা, সবাই ভাইরে রাইখা পলাইছে। আমার ভাই একা ডোমঘরে পইড়া আছে মামা।’

 

উল্লেখ্য, শাওন প্রধান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহে আলীর ছেলে । এবং সে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলীর ভাতিজা। শাওন ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ