যুবদলের পদ যেনো সোনার হরিণ!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটিতে পদ পদবি নেতাকর্মীদের কাছে ক্রমেই সোনার হরিণ হয়ে উঠছে। একদিকে জেলা যুবদলের কমিটি চলছে তিনজন আর পাঁচজন দিয়ে অপরদিকে দীর্ঘদিন মহানগর যুবদলের মূল কমিটিও এরূপ আংশিক থাকার পর অতি সম্প্রতি ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ একটি আহবায়ক কমিটি পেয়েছে তবে এখনো পর্যন্ত পায়নি কোনো ইউনিট কমিটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয় না আর নেতাকর্মীরাও পায়না পদ পদবী। দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিজেদের মাঝে সমন্বয়ের অভাব, কমিটি বাণিজ্য আর নিজ বলয়ের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা- তিন কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয় না আর নেতাকর্মীরাও পায় না তাদের রাজনৈতিক পরিচয়।

সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের বর্তমানে তিনজনের কমিটিতে তিনজনের কারো সাথেই কারো সমন্বয় নেই। ৫ আগস্ট এর পূর্বে যে কোন বড় কর্মসূচিতে তিনজন আলাদা শোডাউন করতেন। ৫ আগস্টের পরে আর এমনটি না করলেও তিনজন তিন মেরুতে বসবাস করছেন এখনো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানায়, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন সংগঠনকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তিনজনই ব্যস্ত টাকা কামানো নিয়ে। বিভিন্ন ঝুট সেক্টর, বালু মহল দখলসহ হাট-ঘাট-বাজার-পরিবহনের বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তিনজন ব্যস্ত। সংগঠন গতিশীল করার কোনো চেষ্টাই তাদের মাঝে দেখা যাচ্ছে না আর তাই আমরা যারা দীর্ঘদিন যুবদলের সাথে কাজ করছি কিন্তু কমিটিতে পথ পদবী পাচ্ছি না তাদের কাছে এখন যুবদলের এক একটা পদ সোনার হরিণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর শহিদুল ইসলাম টিটুকে সভাপতি এবং গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের ৮ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদ। এতে সহ-সভাপতি করা হয় সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামতকে, সহ সভাপতি, এ কে এম আমিরুল ইসলাম ইমন, সহ সভাপতি, হারুন অর রশিদ মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূইয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে জিয়াউল হাসান ইসলাম চয়নকে।

২০২২ সালের ১৬ মার্চ গোলাম ফারুক খোকনকে আহ্বায়ক ও ভিপি কবির হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মশিউর রহমান রনিকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু এ কমিটি ঘোষণা করেছিলেন।

২৯ আগষ্ট ২০২৩ সালে সাদেকুর রহমান সাদেককে আহবায়ক আর মশিউর রহমান রনিকে সদস্য সচিব এবং খায়রুল ইসলাম সজীবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বান করে তিন সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি এই কমিটি দুই বছর পার করলেও এখনো তিনজনেই রয়ে গেছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের অবস্থা আরো করুন। তাদের না ছিলো মূল কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ, না আছে কোনো ইউনিট কমিটি। অতি সম্প্রতি মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্য আহবায়ক কমিটি গঠিত হলেও আটকে আছে ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ। রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও যুবদলের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছে তবুও হাল ছাড়েনি। আশা ছিলো ৫ আগস্টের পরে তাদের সবগুলো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে আর তাদের বহুদিনের কাঙ্খিত রাজনৈতিক পরিচয় মিলবে কিন্তু তাদের ভাগ্যে আর শিকে ছিঁড়ে না। তাদের মনের আশাও পূর্ণ হয় না, রাজনৈতিক পরিচয়ও মিলে না।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মূল সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর শুরু হয় ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ। এ লক্ষ্যে পরপর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কর্মীসভাও অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু হঠাৎ করে মাঝপথে এই কার্যক্রম হোঁচট খেয়ে পড়ে। আটকে যায় কর্মী সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায় ইউনিট কমিটির গঠনের কার্যক্রম। নেতাকর্মীদের কাছে যুবদলের পদ পদবী সোনার হরিণ হয়েই থাকলো।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি, মমতাজ উদ্দিন মন্তুকে সাধারণ সম্পাদক, মনোয়ার হোসেন শোখনকে সহসভাপতি, সাগর প্রধানকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রশিদুর রহমান রশোকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই কমিটি বিলুপ্ত করে যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদ।

২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ঘোষনা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভ আহবায়ক কমিটি। মমতাজউদ্দিন মন্তুকে আহবায়ক আর মনিরুল ইসলাম সজলকে সদস্য সচিব করে ঘোষনার প্রায় দুই বছর এই পাঁচজনেই আটকে ছিলো মহানগর যুবদল। এই সময়ের মধ্যে মহানগর যুবদল নিজেদের কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে পারেনি, পারেনি কোনো ইউনিট কমিটিও ঘোষনা করতে। তাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ব্যানারে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে আসা নেতাকর্মীদের কারো কোনো পদ পদবী বা রাজনৈতিক পরিচয় ছিলো না।

২০২৩ সালের ২৯ আগষ্ট মনিরুল ইসলাম সজলকে আহবায়ক, সাগর প্রধানকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় মহানগর যুবদলের তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি। এই কমিটিও গত প্রায় দুই বছরে ইউনিট কমিটিগুলি গঠন করতে পারেনি। এর ফলে নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াই জীবন বাজি রেখে লড়াই করে গেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ