নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে রাজনীতির বাইরেও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য দিপু ভূইয়ার মাঝে চলে আসা এই অদৃশ্য প্রতিযোগিতা এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগ সংগঠনগুলোর কমিটিতে নিজের লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লড়াই এখন এই দুই নেতার মধ্যে যা শংকায় ফেলে দিয়েছে নেতাকর্মীদের। কারন নিজের লোক কমিটিতে দিতে গিয়ে তারা অনেক যোগ্য পরিশ্রমী কর্মীকে মাইনাস করে ফেলছেন এবং অযোগ্যদের পদায়িত করছেন। ফলে রাজপথের অবদান মূল্য পাচ্ছে না। তাই অবিলম্বে তাদের এই অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম আজাদের উত্থান ঘটে এক এগারো পরবর্তী সময়ে। এর আগে রাজনীতিতে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। এই হিসেবে তাকে অনেকেই হাইব্রিড নেতা হিসেবেই মনে করেন। তবে এই হাইব্রিড নেতাই এখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নিজের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। নিজ এলাকা আড়াইহাজার ছাড়াও শহরের রাজনীতিতেও কলকাঠি নাড়ছেন আজাদ। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোতে একটি আলাদা বলয় সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন বলেও অভিমত অনেকের। কয়েক বছর আগেও যাকে আড়াইহাজারের রাজনীতিতে দেখা যায়নি তাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে আধিপত্য সৃষ্টি করতে দেখে তাই তৃণমূলের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে হতাশা।
তৃণমূলের দাবি, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হতো প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সবসময়ই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে চিত্র এখন অনেকটাই মলিন হয়ে পরছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সেই আগ্রসী রূপ এখন আর নেই। কমিটি বানিজ্য আর দ্বন্দ কোন্দলের কারনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছে। আর এ দুরবস্থার জন্যে নেতাকর্মীরা দায়ী করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নব্য কিংমেকার নজরুল ইসলাম আজাদকে। আজাদের ডুয়েল পলিটিক্সের শিকার হয়ে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আর সুবিধাবাদীরা তাদের জায়গা দখল করছে। ফলে দুর্বল হয়ে পরছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো, ভেঙ্গে পরছে চেইন অব কমান্ড।
অপরদিকে রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা দিপু ভূইয়া পারিবারিক সূত্রে বিশাল সম্পদের মালিক হওয়ায় টাকার জোরে রাজনীতি করে যাচ্ছেন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। কারণ গত ১৫ বছর যাবত সরকারের জুলুম নির্যাতনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম হয়ে গেলেও এর একটু আঁচও লাগেনি দিপু ভূইয়ার গায়ে। তাকে কখনো গ্রেফতারও করেনি পুলিশ কিংবা তার ব্যবসা বানিজ্যে বাঁধাও কেউ দেয়নি। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে থাকার কারনেই দিপু ভূইয়া স্বচ্ছন্দে রাজনীতি করে যেতে পারছেন বলে প্রচলিত আছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে।
সরকারী দলের সাথে আতাঁত করার অভিযোগ শুধু দিপু ভূইয়ার বিরুদ্ধেই নয় বরং দিপু অনুসারি সকল নেতাকর্মীদেরও একই অবস্থা। দিপু ভূইয়া এবার টাকার জোরে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং এরই অংশ হিসেবে নিস্ক্রিয় গোলাম ফারুক খোকনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। বাকি কমিটিগুলোতেও নিজের লোক দেওয়ার জন্যে টাকার বস্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। আর এভাবেই দিপু আজাদের মতো নেতাদের কারনেই রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।