ভাঙ্গছে জেলা বিএনপি, আসছে চমক!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: সীমাহীন ব্যর্থতা আর নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ মাথায় নিয়েই বিদায় নিতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটিকে। খুব শীঘ্রই এ কমিটি ভেঙ্গে নবীন-প্রবীনের সংমিশ্রনে একটি শক্তিশালী কমিটি আসছে বলে জানা গেছে। সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিনকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের বর্তমান আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষনা করা হতে পারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। অভিজ্ঞ গিয়াসের সাথে উদীয়মান খোকনের মেলবন্ধনে নতুন করে গতি পাবে জেলা বিএনপি এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

সূত্রে প্রকাশ, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন নির্বাচন কেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। বিএনপি মুখে যতই বলুক তারা নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের জন্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতিও তারা সেরে ফেলছেন। তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটিও নির্বাচনকে মাথায় রেখেই করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সরকারী দল আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে তাদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান আবারো এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা এক রকম প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে শামীম ওসমানের প্রতিপক্ষ হিসেবে কে বেশী চ্যালেঞ্জিং হতে পারেন সে নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে শামীম ওসমানকে বেকায়দায় ফেলে জয় ছিনিয়ে আনার মতো প্রার্থী কে হতে পারেন, সে নিয়ে ভোটারদের মাঝে চলছে বিচার বিশ্লেষন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে এ আসনে শামীম ওসমানকে পরাজিত করার অভিজ্ঞতা। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মো: গিয়াসউদ্দিন নারায়য়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও এ নির্বাচনের কিছুদিন আগে পর্যন্ত গিয়াসউদ্দিন আওয়ামীলীগেরই প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নির্বাচনের কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।

সূত্র বলছে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন বাকিদের চেয়ে গিয়াস্উদ্দিনের রাজনৈতিক সক্ষমতা অনেক বেশি। দলীয় ভোট ছাড়াও নিরপেক্ষ অনেক মানুষের পছন্দে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে শামীম ওসমান বিরোধীদের প্রথম পছন্দ মো: গিয়াসউদ্দিন। আর তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্ব তুলে দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবীদের কাঁধে। আর তার মাথে গোলাম ফারুক খোকনের নাম শোনা যাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। মূলত দিপু ভূইয়ার ড্যামি হিসেবে এই কমিটিতে খোকনকে রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন হয়েছিলো তিনমাসের জন্যে। কথা ছিলো তিনমাসের মধ্যে এই কমিটি সকল ইউনিট কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপির সম্মেলন আয়োজন করবে। কিন্তু তিনমাসের কমিটি দুই বছর হতে চলেছে কিন্তু সেই কাঙ্খিত কাজটি এখনো করতে পারেনি জেলা বিএনপি বরং একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে ব্যর্থতার পাল্লা কেবল ভারী করেই চলেছে তারা।

এর আগে কাজী মরিুজ্জামান মনির ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বধীন জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয় ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এরপর ২০২১ সালের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে আহবায়ক এবং অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। এই কমিটিকে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিলো তাদের আওতাধীন ১০টি ইউনিট কমিটি গঠন করে জেলা কমিটির সম্মেলন আয়োজনের জন্যে। কিন্তু ১০টি ইউনিট কমিটি ঘোষনাকে কেন্দ্র করে তৈমূর ও মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি ও কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ উঠে।

এরই মাঝে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলে আসে। দলীয় নির্দেশ অমান্য করে এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হন জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকার। এই অপরাধে প্রথমে তাকে জেলা বিএনপির আহবায়ক পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে তাকে বিএনপির সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। তৈমূরের বহিস্কারে জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে নাসিক নির্বাচনের আগমুহুর্তে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে হেফাজতের মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন ২য় যুগ্ম আহবায়ক নাসিরউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নাসিরউদ্দিন ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুুন মাহমুদ মিলে গত ২০ জানুয়ারি জেলা বিএনপির আওতাধীন ১০টি ইউনিট কমিটির অনুুমোদন দেন। এই ইউনিট কমিটি অনুমোদন নিয়েও সমালোচনা ঝড় উঠে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযেযাগ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের পদায়ন করা হয়েছে আর মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের করা হয়েছে বঞ্চিত।

তাছাড়া ঘোষিত ১০টি ইউনিট কমিটির বেশীরভাগেই রয়েছে দলীয় কোন্দল আর বিভক্তি। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ইতিমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটি বাতিল করা হয়েছে অথচ একই অভিযোগে বহাল রয়েছে ফতুল্লা থানা কমিটি। রূপগঞ্জের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন সম্মেলন ছাড়াই স্থানীয় একজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতার ঢাকার অফিসে বসে নিজেদের পছন্দমতো গঠন করা হয়েছে ১০টি ইউনিয়ন কমিটি।

তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতারাও বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়য়ক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ্উঠেছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধীতে যাওয়ার। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলো এবং সে কমিটি বিষয়টিতে রোজেলের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। তাছাড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো: চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির পরিবারের বিরুদ্ধে অশালীন পোষ্টার ছাপানো এবং তা বিতরণ করার। এসব বিষয়ে বারবার বিতর্কিত হয়ে পরছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক কমিটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ