নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে এখন চলছে বাকযুদ্ধ। একবার সাংসদ শামীম ওসমান সিটি মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে অভিযোগের তীর ছুড়ে মারছেন। আবার আইভীও এর পাল্টা জবাবে শামীম ওসমানকে এক হাত নিয়ে নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন যাবত এ প্রকৃয়া চলে আসলেও গত কিছুদিন যাবত তা প্রকট আকার ধারন করছে। এখন তারা একে অপরকে নানাভাবে অপমান অপদস্ত করে বক্তব্য রাখছেন যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। এতে করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা হচ্ছেন বিব্রত, কলুসিত হচ্ছে বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলের সুনাম।
সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। তাদের দুইজনের দ্বন্দ্ব ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল। বিভিন্ন ইস্যুতে একে অরকে উদ্দেশ্য করে বিষোদগার করে আসছেন। বিগত ২০১১ সালে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমান মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছিলেন শামীম ওসমান। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন আইভী। সে নির্বাচনে আইভী জিতে যান। এরপর থেকেই একে অন্যকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন।
সর্বশেষ একে অপরের সম্পদের বৈধতা নিয়ে বাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের এই বাকযুদ্ধে বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছেন সাধারণ কর্মীরা। এমনকি তাদের দুই জনের দ্বন্দ্বের কারণে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একাধিকার দুইজনের মধ্যে ঐক্যের সুর উঠলেও তৃতীয় একটি মহলের ইন্ধনে তা আর সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ মেয়র আইভীর মায়ের মৃত্যুর পর তাৎক্ষনিক ভাবে সাংসদ সেলিম ওসমান চুনকা কুটিরে গিয়ে আইভীকে সমবেদনা জানালে ওসমান পরিবার ও চুনকা পরিবারের মধ্যে ঐক্য হবে এমন প্রত্যাশা ছিল সাধারণ নেতাকর্মীসহ নগরবাসী।
সাংসদ শামীম ওসমানের স্ত্রী অসুস্থ্য থাকায় ২দিন পর শামীম ওসমানও আইভীকে সান্তনা দিতে চুনকা কুটিরে ছুটে গিয়েছিলেন। এছাড়া শামীম ওসমান আইভীর মা প্রয়াত মমতাজ বেগমের কুলখানিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে সাধারণ নগরবাসীর মত দলীয় নেতাকর্মীরাও এই ঘটনায় ধারণা করে ছিলেন, প্রায় ১ দশকের রেশারেশির অবসান ঘটবে আইভী শামীমের। কিন্তু কয়েকদিন পরই হঠাৎ কবরস্থানে শ্মশানের মাটি ফেলা নিয়ে দুইজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যার প্রভাব পড়েছিল গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও। আইভী অভিযোগ করেছিলেন, শামমি ওসমান ও তার অনুসারিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে ক্জ করছেন। মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যের দুইদিন পর সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন শামীম ওসমান। নির্বাচন পরবর্তিতে সম্পদের বৈধতা নিয়ে তাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়।
গত ৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারী তোলারাম কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান মেয়র আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, রাজনীতি মানে এখন ব্যবসা হয়ে গেছে, ধান্ধা হয়ে গেছে। শত কোটি টাকার বাড়ি বানায় অথচ ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে ১০ লাখ টাকাও নাই। এনবিআর কি করে, দুদক নামে কোনো বস্তু আছে তাও আমি জানি না। কই তদন্ততো দেখি না। আমি মুখ খুলতে চাইনা, সময় হলে সব বলবো। সাংসদ শামীম ওসমানের এই বকব্যের কড়া জবাবও দিয়েছিলেন সিটি মেয়র আইভী। গত ৭ মার্চ বিকেলে শেখ রাসেল নগর পার্কে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজনে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৯ বছর স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, আমি আমার বাবার সম্পদ বিক্রি করে বাড়ি নির্মাণ করেছি, আপনার মত চুরি করে বাড়ি বানাই নাই। মেয়র আইভী আরো বলেছিলেন, তোলারাম কলেজে ফরম ফিলাপ করতে পারেন নাই টাকার জন্য। আজকে কোটি কোটি টাকার মালিক। জাহাজ আছে ১৬-১৭টা। এই জাহাজের মালিক রাতারাতি কিভাবে হলেন। কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। সেটাতো নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে চায়। মেয়র আইভী বলেন, শত শত কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছেন দুবাই মালেশিয়াতে।
আইভীর এ অভিযোগের জবাবে ১৩ মার্চ বিকেলে ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত ইউনাইটেড ক্লাবে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, অনেকে অনেক কথা বলছেন। আমার নাকি ১৬/১৭ টা জাহাজ আছে। দেন না দু চারটা, আমার জন্য ভাল। সাংবাদিকদের ডাকেন আমি আমার সম্পদের ফাইল দিবো আপনি আপনারটা দেন। যদি কোন দুর্নীতি দেখাতে পারেন রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে যাবো। এদিকে, তাদের দুইজজনের বাকযুদ্ধ আবারো সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এনিয়ে নেতাকর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন।