নারায়ণগঞ্জ মেইল: সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে সারাদেশের নিস্ক্রিয় কমিটিগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্ব আস্থা হারিয়েছে সকলের তাই এই কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে নজরকারা নৈপূণ্য প্রদর্শন করায় এবার তাদের আহবায়ক কমিটিকে পূর্নাঙ্গ করা হচ্ছে।
জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে চুড়ান্ত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিএনপি। সরকারের পতন ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে সারাদেশে আন্দোলন চলমান রাখে তারা। প্রায় আড়াই মাস যাবত চলে আসা এই চুড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে দেখা মিলেনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। প্রথমদিকে দুএকটি কর্মসূচি পালন করলেও পরবর্তীতে জেলা বিএনপি শীর্ষ নেতা বা তার অনুসারিরাও কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। আড়াইমাসের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ব্যানার দেখা গেছে কদাচিৎ। পুরো আন্দোলন সংগ্রামে সুপার ফ্লপ ছিলো সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।
সূত্রে প্রকাশ, গত ২৮ অক্টোবরে ঢাকার সমাবেশের আগ থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মী পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া। ২৮ অক্টোবরের পরে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় প্রায় ২০টির উপরে নাশকতার মামলা দায়ের করা হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাই নারায়ণগঞ্জের বিএনপি নেতাকর্মীদের আর ঘরে ফেরা হয়নি।
নেতাকর্মীরা যখন ঘরবাড়ি ছেড়ে ফেরারী জীবন যাপন করছে তখনই চুড়ান্ত আন্দোলনের ডাক আসে। এই ডাকে সাড়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি, মহানগর যুবদল, জেলা যুবদলসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলো গেরিলা ষ্টাইলে পালন করে গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ক্ষেত্রে। সরকার বিরোধী চুড়ান্ত আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি এবং তাদের ইউনিটগুলোর বেশিরভাগ নেতাকর্মীই রাজপথে নামেননি, এমনকি কর্মী সমর্থক দিয়েও কোনো কর্মসূচি পালন করেননি।
গুরুত্বপূর্ন সময়ে এসে জেলা বিএনপির এই নিস্ক্রিয় আচরণ ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনে। দলের মনোনয়ন আর কমিটি গঠনের সময়ে যেসব নেতারা হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে শোডাউন করেন, দলের এই ক্রান্তিলগ্নে ১০ জনের একটি মিছিলও তারা করতে পারলেন না। নেতাকর্মীদের মতে, এরা হলো সুবিধাবাদি রাজনীতিবীদ। এরা দলের সুসময়ে এসে অতিথি পাখির মতো ভিড় করে আর দু:সময়ে পালিয়ে যায়। তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে শক্তিশালি করতে এবার বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ছিলো ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচন পূর্ব আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সরব ছিলো মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের হামলা মামলার ভয়কে উপেক্ষা করে কেন্দ্রের দেয়া প্রতিটি কর্মসূচি তারা পালন করেছেন সফলতার সাথে। রাজপথে মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন সংগঠনের সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু আর আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান রেখেছেন। এমনকি গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। সফল নেতৃত্বগুণের কারনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটিকে পূর্নাঙ্গ রূপ দিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি। খুব শীঘ্রই এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে সভাপতি ও এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপি পূর্নাঙ্গ হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।