নারায়ণগঞ্জ মেইল: ফতুল্লার লালপুর এলাকায় চাঁদ নীট কম্পোজিটের ঘটনা যেন সিনেমার কাহিনীকে হার মানিয়েছে। ব্যবসায়ীকে আটক করে চার ঘন্টা নির্মম ভাবে নির্যাতন করে উল্টো চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনার রহস্য ধীরে ধীরে উন্মোচন হতে শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চুসহ তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেছেন সচেতন মহল। একই সাথে দুর্ধর্ষ জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনি ও কামরুল হাসান মাসুমের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয় ভোক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের মতে, এই গ্রুপের সকল অপকর্মের পেছনে শেল্টার দিচ্ছে মাসুমের মামা শশুর খালেদ হায়দার খান কাজল- এমন অভিযোগ করেছেন ভোক্তভোগীরা। কাজল স্থানীয় সংসদ ভ্রাতৃদ্বয়ের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও কাজলকে নারায়ণগঞ্জের মুকুটহীন বাদশাও বলে থাকেন অনেকে। তবে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মতে, কুখ্যাত রাব্বি রাজাকারের পুত্র এই কাজল।
জানাগেছে, চাঁদ নীট কম্পোজিটের মালিক সোহেল নামে এক ব্যক্তি। সোহেলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর কাছ থেকে নাম মাত্র ভাড়া নিলেও ধীরে ধীরে ফ্যাক্টরির চারদিকের জমি দখল করতে থাকে জনি। এক পর্যায় বাচ্চু ক্রয়কৃত জমিও দখল করে নেয় জনি ও মাসুম। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি আদালতে একাধিক মামলা করাসহ ফতুল্লা মডেল থানায়ও পৃথক দুটি অভিযোগ করেছিল ভূক্তভোগী বাচ্চু। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার বাচ্চুসহ তিনজনকে চার ঘন্টা নির্মম ভাবে নির্যাতন চালায় জনি ও মাসুম বাহিনী।
সিটি টিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাসুম সিগারেট খাচ্ছিল। হঠাৎ সুলতানকে মারধর করে মাসুম ও তার বাহিনীর সদস্যরা। পরে বাচ্চু ও মীর সাজুকে ফ্যাক্টরির ভিতরে নিয়ে নির্যাতন চালায়। সূত্র বলছে, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে চাঁদা দবিীর অভিযোগে এনে গত ১৮ মার্চ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, সুলতান মাহমুদ ও মীর সাজু নামে তিনজনকে আটক করে ফতুল্লা থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল ডাইং কর্তৃপক্ষ। পুলিশ মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর অভিযোগ এনে মামলা হয়। সেই মামলায় এখনো কারাকারে রয়েছে বাচ্চুসহ তিনজন।
এর আগে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গত ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল শিবু মার্কেট এলাকার আব্দুল সামাদ পুত্র কামাল হোসেনকে পিটিয়ে দুই হাত ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় ওই মাসের ১৫ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয় জনি, মাসুমসহ বেশ কয়েজনের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে আহত কামাল হোসেনের বাড়িতে জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। তারা মামলা তুলে না নিলে বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তিতে চাপের মুখে পড়ে সেই মামলাও তুলে নিয়েছিল আহত কামাল। এছাড়াও ২ কোটি টাকা বকেয়ার দায়ে চাঁদ নীট কম্পোজিট ইউনিট টু এর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মালিক জাহিদুল ইসলাম জনি ওরফে মোল্লা জনির সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ ও লাঞ্চিত হয়েছিলো তিতাসের কর্মকর্তারা। এছাড়া এ জনির বিরুদ্ধেও সংবাদ সম্মেলন হয়। ফতুল্লায় এস বি নিট কম্পোজিট প্রতিষ্ঠান (কারখানা) ও ৭১ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে জনি ও মাসুমের বিরুদ্ধে।
সূত্রে আরো জানাগেছে, দখলদার জনির চাঁদ নীট কম্পোজিটের ভিতরে মাদক সেবনের আখড়া হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাদক সেবন করিয়ে নিজের অবৈধ কাজ হাসিল করে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।