নারায়ণগঞ্জ মেইল: পশ্চিম দেওভোগের বাসিন্দা আশরাফুল আলম। খানপুরের একটি ক্লিনিকে চাকুরি করে। প্রতিদিন শুধুমাত্র ২নং রেলগেইট থেকে চাষাড়া পর্যন্ত যেতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। যানজটের কারণে অনেক সময় পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলে যান তিনি। শহরের যানজটের কারণে আশরাফুলের মত লাখ লাখ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যারফলে নিত্যদিনের যানজটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। শহরের চাষাড়া চত্বর, ২নং ও ১নং রেলগেইট, কালীরবাজার, জিমখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো নিয়মিত যানজটের কারণে চরম দূর্ভেগের সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী।
সচেতন মহল মনে করছেন, শহরের যানজটের অন্যতম কারণ শহরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা পরিবহন স্ট্যান্ড। শহরে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা পরিবহন স্ট্যান্ড উচ্ছেদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার উদ্যোগ না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সাথে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। মূলত শহরের অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ডগুলো থেকে যে চাঁদা আদায় করা হয় তার একাংশ ক্ষমতাসীন দলের নেতা, বিএনপির নেতা, কতিপয় পুলিশ সদস্য এমনকি সিটি কর্পোরেশনের অসাধু কর্মকর্তা ভাগ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বার বার অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হুংকার দিলেও বাস্তবে স্থায়ী কোন সমাধান মেলেনি। আর এ কারনেই নারায়ণগঞ্জ শহরে যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ডের এখন ছড়াছড়ি। যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড গড়ে তুলে নিয়মিত চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কয়েকটি অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এই সকল স্ট্যান্ড শহরের যানজটে ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও পকেট ভারী হচ্ছে কতিপয় পরিবহন চাঁদাবাজদের।
বিশেষ করে চাষাড়া চত্বরের তিনটি পয়েন্টে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা লেগুনা ও সিএনজি স্ট্যান্ডের কারণে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিটি লেগুনা থেকে দিনে আড়াইশ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানাগেছে। এছাড়াও জিমখানা ইজিবাইকের স্ট্যান্ড থেকে প্রতি গাড়ি প্রতি ১৬০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই চাদাঁর একাংশ সদর মডেল থানা পুলিশের পৌঁছে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ছয়টি স্ট্যান্ডের বিপরীতে শহর জুড়ে গড়ে উঠা ২২টি অবৈধ স্ট্যান্ড শহরকে পরিনত করেছে স্ট্যান্ডের নগরী হিসেবে। আর এইসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে নগর জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। তীব্র যানজটের কবলে পড়ে মানুষের শ্রম ঘন্টা তো যাচ্ছেই, জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অতি মূল্যবান সময়।
শহরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ইজারা দেয়া বা অনুমোদিত যানবাহন স্ট্যান্ডগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নিউ মেট্রো হলের সম্মুখের সড়কে বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড, ১নং রেল গেইটে সিএনজি স্ট্যান্ড, ভাষা সৈনিক সড়কে শহীদ মিনারের পিছনের রাস্তায় সিএনজি স্ট্যান্ড, জিমখানার সামনে মন্ডলপাড়ায় সিএনজি স্ট্যান্ড (তবে সিএনজি স্ট্যান্ডের সাথে ইজিবাইকের স্ট্যান্ড অবৈধ) ও থানা পুকুর পাড়ে লোড আনলোড স্ট্যান্ড। এছাড়া রাস্তা ক্ষতিপূরণ ফি আদায় করার জন্য ইজারা রয়েছে আরো চারটির। এগুলো হলো যথাক্রমে: নিতাইগঞ্জ, থানা পুকুর পাড়, চারার গোপ কালির বাজার ও ১১নং ওয়ার্ডের বরফকল। অথচ স্ট্যান্ড রয়েছে কমপক্ষে ২২টি। সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখতে পাওয়া অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ডের মধ্যে রয়েছে, নিতাইগঞ্জ মোড়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার অবৈধ স্ট্যান্ড। বঙ্গবন্ধু সড়কের মন্ডলপাড়া পুলের সাথে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত সিএনজি স্ট্যান্ডের পাশেই জিমখানা মোড়ে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার স্ট্যান্ড। ডায়মন্ড হলের সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড, রাস্তার অপর পাশে অগ্রনী ব্যাংকের সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড, রহমত উল্লাহ মুসলিম ইন্সটিউটের সম্মুখে সিএনজি স্ট্যান্ড, ২নং রেল গেইটের সামনে মিড টাউন কমপ্লেক্স থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত সিএনজি, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন গাড়ি রাখার স্ট্যান্ড, ১নং রেল গেইটে মিষ্টি মুখের সম্মুখে সিএনজি স্ট্যান্ড, তারপরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, কালীর বাজারে আব্দুল্লা শাহ’র মাজারের সামনে শীতলক্ষ্যা বাস কাউন্টার কাম স্ট্যান্ড, এর একটু আগেই কালী মন্দিরের সামনে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা ও সিএনজি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া খাজা সুপার মার্কেটের সামনে লেগুনা স্ট্যান্ড, সোনালী ব্যাংকের সামনে সিএনজি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া মোড়ে সুগন্ধা বেকারীর সামনে লেগুনা-সিএনজি স্ট্যান্ড, চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে লেগুনা-সিএনজি স্ট্যান্ড ও শীতল পরিবহনের স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের মুলে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদেরই ছত্রছায়ায় এসব স্ট্যান্ড থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে প্রতিদিন বিপুল পরিমানের টাকা। এদিকে, শহরের হকার উচ্ছেদে পুলিশের উচ্ছেদ অভিযার অব্যাহত থাকলেও অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড উচ্ছেদে তেমন অভিযান যেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জ মেইলকে জানান, লেগুনা-সিএনজি’র জন্য নির্দিষ্ট কোন স্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র পাকিংয়ের কারণে যানজট বাড়ছে। এজন্য চালকদের সচেতনতা জরুরী। তবে যানজট নিরসনে অতিরিক্ত পুলিশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।