যুবদলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন খোরশেদ!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: একটা সময় ছিল যখন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল বলতে মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকেই বুঝাতো। রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করতে শুরু করে নেতাকর্মীদের সুখে-দুখে আগলে রাখার কাজটি সুনিপুনভাবে করে গেছেন খোরশেদ, আর এ কারণে নেতাকর্মীরাও সবাই ছিলেন খোরশেদের নিয়ন্ত্রণে। সভাপতি থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত সকলেই ছিলেন একজোট। শুধুমাত্র সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক সাগর প্রধান ছিলেন ব্যতিক্রম। খোরশেদের সাথে পাল্টাপাল্টি করে কর্মসূচি পালন করছেষ তিনি। কমিটির বাকি সদস্যরা সবাই ছিলেন খোরশেদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে যুবদলের প্রাণপুরুষ খোরশেদ যুবদলকেই ভুলে গেলেন বরং সরকারি দলের এমপি এবং সরকার ঘনিষ্ঠজনদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুললেন। ফলে নিজে নিয়ন্ত্রণে থাকা যুবদলের নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে খোরশেদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করলেন এবং খোরশেদ বিরোধী বলয় ক্রমে ভারী হতে থাকলো। মহানগর যুবদল থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন প্রভাবশালী সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের একক আধিপত্যের অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এতোদিন নেতাকর্মীদের নিজের অনুগত কর্মচারীর মতো ব্যবহার করে সংগঠনে পরিবারতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিলেন খোরশেদ। খোরশেদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদের সুযোগ রাখতেন না তিনি। তার নিজের মতোই সংগঠনকে ব্যবহার করতেন খোরশেদ।

তবে খোরশেদের সেই আধিপত্যের বিরুদ্ধে এবার একযোগে গর্জে উঠেছে সাধারণ নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ জমা হয়ে এবার বিস্ফোরণে রূপ নিয়েছে। আর এতে করে খোরশেদ ক্ষিপ্ত হয়ে অসাংগঠনিক আচরণ করছেন, এমনকি পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের গায়ে পর্যন্ত হাত তুলতে দ্বিধা করছেন না তিনি।

মহানগর যুবদলের এই বিপ্লবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু, সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধান। সুপার ফাইভের এ তিনজনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আজ খোরশেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ১৭ সেপ্টেম্বর দেখা গেছে সে ঐক্যবদ্ধ রূপের বহি:প্রকাশ। এদিন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে উৎসবমূখর পরিবেশে বন্দরে যুবদলের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়েছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে একের পর এক নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা অভিযোগ সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে। এর জন্যে গত কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় সভাপতি সেক্রেটারীর কাছেও তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। যুবদলের সভাপতি খোরশেদ গত ৬ মাসে যুবদলের ব্যানারে একটি কর্মসূচিও পালন করেননি বরং টিম খোরশেদ নাম দিয়ে নিজেকে হাইলাইট করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এর কারনে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতারা তার কাছে কৈফিয়ত চাইলে তিনি তার সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়াও যুবদলের ইউনিট কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার কোন মূল্যায়ন না করে তার অনুগতদের দিয়ে কমিটি সাজানোর পায়তারা করছেন বলেও কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ রয়েছে খোরশেদের বিরুদ্ধে। এ কারনে কেন্দ্রে জমা দেয়া কমিটির তালিকা বাতিল করে দেয়া হয় এবং পুনরায় কেন্দ্র থেকে ফরম দেয়া হয় সকল পদ প্রার্থীদের মাঝে বিতরণ করার জন্রে এবং নির্দেশনা দেয়া হয় সুপার ফাইভের সকলকে নিয়ে সকলের সাথে আলোচনা করে তা বিতরণের জন্যে। কিন্তু এবারেও কেন্দ্রের নির্দেশনার কোন তোয়াক্কাই না করে খোরশেদ একাই সেই ফরম বিতরণের উদ্যোগ নেন মঙ্গলবার তার নিজ বাড়িতে। এ বিষয়ে সুপার ফাইভের তিনজন সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধানের সাথে কোন আলোচনাই করেননি।

ফরম বিতরণের জন্যে নিজ অনুগত নেতাকর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন খোরশেদ। এ অনুষ্ঠানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের আহবায়ক প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম মুসাকে ডেকে আনেন খোরশেদ। সেখানে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত পরিবহন সন্ত্রাসী বোরহানসহ ৫/৬ জন অতর্কিত হামলা চালায় মুসার উপরে। এ সময় সভাপতি খোরশেদ সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি নিরব ভূমিকা পালন করেন।

খোরশেদের একের পর এক স্বৈরাচারী আচরণের কারনে নেতাকর্মীরা তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এবং নতুন দিগন্তের সূচনা করছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ