নারায়ণগঞ্জ মেইল: টানা দুইবার নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টিও যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এই নেতার ভরাডুবি হয়েছে। সোনারগাঁ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাতের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন তিনি। খোকার পরাজয়ের নেপথ্য বারণ হিসেবে সকলে মনে করেন ওসমান পরিবারের আশীর্বাদ না থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে লিয়াকত হোসেন খোকার।
জানাগেছে, প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমানের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল লিয়াকত হোসেন খোকার। নাসিম ওসমানের হাত ধরেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেছিলেন তিনি। নাসিম ওসমানের আশীর্বাদে গত দশম জাতীয় সংস নির্বাচনে বিনা ভোটে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তারই ছোট ভাই সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ওসমান পরিবারের সহযোগীতা নেন লিয়াকত হোসেন খোকা। সেই নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। পরবর্তিতে ওসমান পরিবারের চাপে সেই নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলেন কায়সার হাসনাত। যার ফলে অনেকটা ফাঁকা মাঠে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য হয়েছিলেন খোকা।
কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই ৃশ্যপট পাল্টে যায়। ওসমান পরিবারের সাথে কায়সার হাতনাতের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। একই সাথে খোকার সাথে ওসমান পরিবারের দুরত্ব সৃষ্টি হয়। যার প্রভাব পড়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। নির্বাচনের আগমুহূর্তে বেশ কয়েকটি কর্মসূচী পালন করেছিলেন কায়সার হাসনাত। আর কর্মসূচীগুলোতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এসময় কায়সার হাসনাতের সাথে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট সম্পর্কে দেখা যায়। একই সাথে শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের অনুসারিরাও কায়সার হাসনাতের পক্ষে মাঠে নামেন। যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নানা নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত যে ২৬ টি আসনে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয় সেই তালিকায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের কায়সার হাসনাতের নাম ছিল না। যার ফলে ভোটের মাঠ জমে উঠে সোনারগাঁয়ে। আর ওসমান পরিবারের আশীর্বা না থাকায় নির্বাচনে ভরাডুবি হয় লিয়াকত হোসেন খোকার।
এদিকে নির্বাচনে পরাজয়ের পরই খোকার কর্মী-সমর্থক ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি-ঘরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই আসনে বিজয়ী নৌকার শতাধিক সমর্থক একযোগে এ হামলা চালায় বলে জানান উপজেলা জাপা নেতারা। রবিবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার খবর আসে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন পুরো সোনারগাঁয়ের জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। আক্রান্তদের সবাই লিয়াকত হোসেন খোকার কর্মী-সমর্থক ও এজেন্ট। যারফলে ওসমান পরিবার ছাড়া সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা।