নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জুড়ে যখন নৈরাজ্য চালাচ্ছে বিএনপি তখন বিএনপির নেতাদের আটকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতাকারীকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ফতুল্লা থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে ফতুল্লা পুলিশের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে।
ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেককে গ্রেফতার করতে কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবি গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলেও শনিবার দুপুরে ফতুল্লা যুবদলের নেতা ফয়সাল আল মামুন রিমনকে আটক করে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই সাইফুল ও এসআই শাহাদাৎ। পরে থানার ভিতর না নিয়ে বাইরে সীমা কম্পিউটারে বসিয়ে রাখা হয়। সেখানেই ঘন্টাখানেক আটক রাখার পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
পরবর্তিতে ঘটনা জানাজানি ও রিমনের অবরোধ কর্মসূচী পালনের ছবি ছড়িয়ে পড়লে শনিবার সন্ধ্যায় পুনরায় রিমনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।
এব্যাপারে রিমনের ঘনিষ্টজনদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, রিমনকে ছাড়িয়ে আনার পর সন্ধ্যার পর পুলিশ আবারো বাড়িতে এসেছিল। যার একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনাটি থানার অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে জানাজানি হলে শুরু হয় সমালোচনা।
এব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফতুল্লা মডেল থানায় নূরে আযম মিয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকেই থানা পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্য শুরু হয়েছে। যার ফলে ফতুল্লার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে ফতুল্লায়। টাকা ছাড়া মামলা হয় না এমন অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের পর বিশেষ সুবিধায় থানা থেকে ছেড়ে দেয়া অথবা ৩৪ ধারায় আদলতে প্রেরণ করার বেশ কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি টাকা না দেওয়ায় অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে ফতুল্লা মডেল থানায়।
সম্প্রতি ফতুল্লার শিযারচর তক্কারমাঠ এলাকার ব্যবসায়ী আতাউর রহমানকে মারধর করার ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছিলো। পরবর্তিতে থানায় ডেকে আসামীদের সাথে মীমাংসা করার চেষ্টা করে পুলিশ। মীমাংসা পরিবর্তে মামলা নিতে অনুরোধ করে আতাউর। পরে পুলিশ আতাউরকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে আদালতে মামলা করতে যান আতাউর। কিন্ত এঘটনার একদিন পরই উল্টো আতাউর ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। সেই মামলার বাদী ছিলেন আতাউরের অভিযোগের বিবাদী।
থানার মামলায় জামিন নেয়ার পর আবারো আতাউরের উপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। পরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে থানায় মামলা করতে ৩/৪দিন ঘুরাঘুরি করলেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। সেই সময় আতাউরের সাথে কথা বললে তিনি জানিয়েছিলেন, মামলা করতে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল পুলিশ। আমার কাছে ৮ হাজার টাকা ছিল। এই টাকায় মামলা হবে না বলে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, থানার বাহিরে কম্পিউটার দোকানগুলোতেও ওসি নূরে আযমের দালাল নিয়োজিত করেছেন। সেবা প্রার্থীরা অভিযোগ টাইপিং করতে আসলেই মামলা নেয়ার বিষয় সরাসরি চুক্তি করে ওসির কাথে পৌঁছে দেন। জমি নিয়ে বিচার সালিশের ব্যবস্থা রয়েছে থানাতে। ওসির বিশ্বস্ত অফিসারগণই সেই দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও ফতুল্লার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের সাথে ওসির সুসম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিসিকির ঝুট সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অবৈধ সেক্টরগুলো থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছেন নূরে আজম। যদিও এবিষয়গুলো থানাতে ওপেন সিক্রেট।
যুবদল নেতাকে আটকের পর মুক্তি ও থানার নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমা জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।