নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় ১৩ দফায় তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেছেন মামলার তদন্ত কর্মরতাকে।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ১৯ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করেছেন। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ৪০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ দফায় ২৫ জনের পূর্ণ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আরেকজনের আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
মামুনুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে জেরা করা হয়েছে। আগামী তারিখে আবারও তাকে জেরা করা হবে।
তিনি আমাদের জেরায় অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তাকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম আপনি কি বাদীনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তিনি বললেন জিজ্ঞাসাবাদ করিনি।
তিনি আরও বলেন, এত বড় একটা আলোচিত মামলায় বাদিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নাই তাহলে বুঝা যায় এটা একটা বানানো মামলা। এতে প্রমাণিত হয় এটা একটা ভূয়া মামলা মিথ্যা মামলা। তিনি কারও কাছ থেকে তদন্ত করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারে নাই। এটা একটা গোঁজামিলের তদন্ত।
আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জেরা করেছে আসামী পক্ষের আইনজীবী।
আসামী পক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দুইদিন জেরা করেছে। আরও একদিন জেরা করার জন্য সময় চেয়েছে। আসামী পক্ষের আইনজীবীরা ইচ্ছা করেই সময়ক্ষেপন করেছে। এ পর্যন্ত যারা সাক্ষী দিয়েছেন সকলেই বাদীনির পক্ষে সাক্ষী দিয়েছে। আসামী বাদীনিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে।
এর আগে দীর্ঘ ৫ মাস পর সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে দিয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয় মামুনুল হককে। সাক্ষী শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। একইসঙ্গে ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
একই বছরের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। ওইসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে তাকে ঘেরাও করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। এরপর সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় মামুনুল হককে। পরে এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলা করেন ঝর্ণা। তবে ঝর্ণাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল হক।