তালিকায় নাম লেখালেন দুই ভাই!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কিছু নেতা রয়েছেন যারা পদ-পদবিতে বিএনপি’র সাইনবোর্ড ব্যবহার করলেও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন না। বরং সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের সাথে তাদেরকে বেশি দেখা যায়। অনেকে কোনো প্রকার রাখঢাক না করে সরাসরি সরকারি দলের নেতাদের সাথে ঘুরেন, আবার অনেকে গোঁপনে গোঁপনে আঁতাত করে চলেন। এরা দিনের আলোয় বিএনপি করলেও রাতের অন্ধকারে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে চলেন। আর এই তালিকাটা দিনকেদিন লম্বা হচ্ছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নেতাকর্মীদের মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ফতুল্লা থানা বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, মহানগর বিএনপি’র সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শওকত হাশেম শকু, দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার, মোহাম্মদ সুলতানসহ অসংখ্য নেতা রয়েছেন এই তালিকায়। তৃণমূলের মতে এই তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরও দুটি নাম। এই নাম দুটি হলো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও তার ছোট ভাই ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের প্রার্থীতা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন নারায়ণগঞ্জের আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবারের প্রেসক্রিপশনে তিনি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। বিষয়টি প্রথমে গোঁপন থাকলেও পরে আর গোঁপন নেই বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল। বিশেষ করে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এর ছোট ভাই ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় রাজনৈতিক মহলে তৈমুরের অবস্থান পরিস্কার হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সকলে।

সূত্র মতে, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি দলীয় সমর্থনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে তাকে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হননি। এরই ঠিক পাঁচ বছর পরে তৈমুরের দল বিএনপি যখন বর্তমান সরকার এবং সরকারের অধীনস্থ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৈমুর আলম খন্দকার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তৈমুরের এই আকস্মিক পরিবর্তনে সন্দেহের দানা বাঁধে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মনে। অনেকে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে উত্তর-দক্ষিণে যে বিরোধ চলমান রয়েছে সেই বিরোধের দক্ষিণের আইভীকে ঠেকাতে উত্তর মেরুর প্রেসক্রিপশনে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার।

বিগত প্রায় এক মাস যাবত নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জনটি ডালপালা ছড়িয়েছে। তবে সেটা ছিল গোঁপনে গোঁপনে। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হোসেন লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন‌। রবিউলের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকে চাপা গুঞ্জন সত্যে পরিণত হয়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বুঝতে বাকি থাকে না কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়াচ্ছে। কারণ কোনো উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হোসেন মাঠ ছেড়ে দেওয়ার পাত্র ছিলেন না। আর সেই উপরমহলের ঘনিষ্ঠজন এখন মেয়র প্রার্থী তৈমুর। যিনি নিজের ভাইকে কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে সেই উপর মহলের শরণাপন্ন হয়েছেন। আর সেই উপরমহলের ইশারায় তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের জয়ের পথ মসৃণ করতে রবিউল হোসেন কে সে পথ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন নারায়ণগঞ্জবাসী। আর এভাবেই তারা দুই ভাই সেই গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় নিজেদের নামটি উঠিয়ে ফেললেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ