ব্যক্তি ইমেজে আইভীর চেয়ে পিছিয়ে তৈমুর

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়ের চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছে প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভালো-মন্দ আর দোষ গুণের সমন্বয়। আর এদিক দিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা সেলিনা হায়াৎ আইভী তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন।

স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় ইমেজের চেয়ে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যাক্তি ইমেজ অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে সাধারণ ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশচুম্বী। এর বিপরীতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের ব্যাক্তি ইমেজ প্রায় শূন্যের কোঠায়। দলীয় পরিচয়ের বাইরে তার নিজস্ব কোনো স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে ওঠেনি নারায়নগঞ্জে। আর দলীয় পদ পদবী খুইয়ে নির্বাচনের মাঠে অনেকটা ব্যাকফুটে তিনি।

প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তির ভাবমূর্তিটাই নারায়ণগঞ্জে গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুই সিটি নির্বাচনেও এটি দেখা গেছে। গত দুবারের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রথম দফায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে যত ভোট পেয়েছিলেন, দ্বিতীয় বার দলীয় প্রতীকে তার চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন। এবারও সরকারি দলের প্রতীক নিয়ে তাঁর সমর্থকদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি আছে। তাঁরা বলছেন, দলীয় প্রতীকের জন্য সরকারের সমালোচনার দায়ও নিতে হচ্ছে।

গত দুই সিটি নির্বাচনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়েছিলেন আইভী। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। এরপর ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে আইভী পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট। যদিও ওই নির্বাচনে শামীম ওসমান দলীয় প্রার্থী হিসেবে আইভিকে সমর্থন দিয়েছিলেন। আর আইভীর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত পান ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।

প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৫ ভোটের ব্যবধানে জয় পেলেও পরের বার দলীয় প্রতীক নিয়ে ৭৯ হাজার ৫৬৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আইভী। তাঁর সমর্থকেরা বলছেন, এবার দলীয় প্রতীক না হলে আইভী আরও এগিয়ে থাকতেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ভরাডুবি দেখা গেছে। কোথাও কোথাও দলীয় প্রতীক নিয়ে জামানত হারিয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। তাই আইভীর প্রচারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিও তেমন চান না তাঁরা।

দলীয় প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কদমতলী এলাকার বাসিন্দা কমর আলী বলেন, আইভী আইভী-ই। আইভীকে নৌকা কেন? অন্য প্রতীক দিলেও আইভী পাস করবেন। সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা জুয়েল হোসেন বলেন, নৌকা মানুষ পছন্দ করে না। প্রতীকের কারণে আইভী পেছনে পড়তে পারেন। জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ হবে না। আইভী কাজ করেছেন, কাজের কারণে তাঁকে ভোট দিব।’ আর সিদ্ধিরগঞ্জে চিত্তরঞ্জন এলাকার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ বলেন, আইভীর জনপ্রিয়তা আছে। তবে নৌকার প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণার কারণে তিনি বেকায়দায় পড়তে পারেন। তৈমুর ধানের শীষের প্রতীক না পেলেও বিএনপির ভোট পাবেন।

এবার বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে বিএনপির নেতা তৈমুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে লড়ছেন। ইতিমধ্যেই দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে তৈমুর আলমের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএনপি। এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আহ্বায়কের পদ থেকে তৈমুরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তৈমুরের নির্বাচনে মাঠে থাকা বিএনপির অন্য কোনো নেতাকে দলটি বহিষ্কার করেনি।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ