খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা চাননা ধানের শীষের প্রার্থীরা

নারায়ণগঞ্জ মেইল: গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবিতে উত্তাল সারাদেশ নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন কিন্তু সে সব কর্মসূচিতে দেখা মিলছে না একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে ধানের শীষ প্রতিকে নির্বাচনে অংশ নেয়া পাঁচ প্রার্থীকে।

সূত্রে প্রকাশ, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে পুলিশের হামলা মামলায় বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তাতে পাশে পাননি তারা বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষের ৫ প্রার্থীকে। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা প্রার্থীদের। আর বর্তমানে খালেদা জিয়া মুমূর্ষ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবিতে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা একের পর এক আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন অথচ সেখানেও দেখা মিলছে না নারায়ণগঞ্জের সেই এমপি প্রত্যাশীদের।

গত সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ থেকে কাজী মনিরুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসন থেকে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে মুফতি মনির হোসেন কাশেমী এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে ধানের শীষে প্রতিদ্বন্দিতা করেন এসএম আকরাম।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুল ইসলাম ভূইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। তিনজনের মধ্যে এড. তৈমূর আলম খন্দকার ছিলেন রাজপথের সবচেয়ে পরীক্ষিত নেতা যাকে সব সময় আন্দোলন সংগ্রামে কাছে পেয়েছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু অজানা ম্যাজিকে মনোনয়নের শিকে ছেড়ে কাজী মনিরের ভাগ্যে। নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য কাজী মনির যে পরিমান দৌড় ঝাপ করেছেন তার বিন্দু পরিমান দেখা যায়নি রাজপথের আন্দোলনে।

নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসন থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমন। প্রবল প্রতিদ্বন্দিতার পর এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন নিশ্চিত হয় নজরুল ইসলাম আজাদের। মনোনয়ন পেয়ে বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে এলাকায় কয়েকটি শোডাউন করেন আজাদ, ব্যাস ঐ পর্যন্তই। তার পর আর এলাকায় তেমন একটা যানি আজাদ, নেননি নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনাগাঁ) আসন থেকে এককভাবে দলীয় মনোনয়ন ছিনিয়ে আনেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কায়নির্বাহী সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান। নির্বাচনে মনোনয়নের পর সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন এই নেতা, কিছুদিন পালন করেছিলেন দলীয় নানা কর্মসূচি। কিন্তু এর থেকে আবারো হারিয়ে যান তিনি।

নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে বেশী নাটকীয়তার সুষ্টি হয় নারয়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন নিয়ে। এ আসনে আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী একেএম শামীম ওসমানের মোকাবেলা করার জন্য মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি মো: গিয়াসউদ্দিন ও এ আসন থেকে এবার নির্বাচনে অংশ নেয়া মো: শাহ আলম। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ আসনটি বিএনপি ছেড়ে দেয় ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে ইলামায়ে ইসলামকে। সংগঠনের জেলা সভাপতি মুফতি মনির হোসেন কাশেমীকে এ আসনে দেয়া হয় ধানের শীষের মনোনয়ন। মুফতি মনির হোসেন কাশেমী মনোনয়ন পাওয়া পর্যন্তই ছিলেন মাঠে, তারপরই হাওয়া। এমনকি তিনি নিজের ভোটটি পর্যন্ত দিতে যাননি।

নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে ধানের শীষের মনোনয়নে ছিলো সবচেয়ে লম্বা লাইন। এ আসনের সাবেক সাংসদ এড. আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গে লড়াইয়ে ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম। নির্বাচনের প্রায় দুই মাস আগেই ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে যান এড. সাখাওয়াত। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রাখা হলেও পরবর্তীতে তাকে নেয়া হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। নির্বাচনের পরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। আর এড. আবুল কালাম ও মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ মনোনয়নের চিঠি পেলেও বাজিমাত করেন নাগরিক ঐক্যের এসএম আকরাম। ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচনের পর আর তাকে দেখা যায়নি বিএনপির সাথে। গত তিন বছরে বিএনপির একটি কর্মসূচিতেও উপস্থিত ছিলেন না আকরাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ