মহানগর বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন সাখাওয়াত

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কার্যক্রম একেবারেই ঝিমিয়ে পড়েছে। সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের নিষ্ক্রিয়তা আর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালের দীর্ঘ অনুপস্থিতি পুরোপুরি থামিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি অগ্রযাত্রা। শুধুমাত্র সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে টিকিয়ে রেখেছেন মহানগর বিএনপির অস্তিত্ব।

জানা যায়, গত কয়েক বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যে কয়েকজন বিএনপি নেতা সরব ভূমিকা পালন করেছেন তাদের অন্যতম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। পুলিশের হামলা মামলা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের নিয়ে এড. সাখাওয়াত দরন্ত গতিতে ছুটে বেড়িয়েছেন নারায়ণগঞ্জের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। যেখানেই সরকার বিরোধী আন্দোলন কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে কর্মসূচি পেয়েছেন সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি, সেটা জেলা বিএনপি কিংবা মহানগর, যুবদল নাকি ছাত্রদল সে চিন্তা তিনি করেননি কখনোই। আর এই ছুটে চলাই শেষ পর্যন্ত তার জন্য কাল হতে চলেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির গৃহবন্দি নেতারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে।

সূত্রে প্রকাশ, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আর ক্ষমতার স্বাদ পায়নি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধাণ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এতা দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় মামলা হামলায় নাজেহাল দলটির নেতাকর্মীরা। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারী অনষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা ঠিকমতো বাড়িঘরে থাকতে পারেননি, পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপণ করতে হয়েছে। আর এখন আগের মতো ধরপাকড় না হলেও পুরানো মামলাগুলোতে নিয়মিতই হাজিরা দিতে হচ্ছে তাদের। আর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রধাণ আশ্রয়ের কেন্দ্র হলেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলাগুলোতে বিনা পয়সায় আইনী সহায়তা প্রদান করে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। অথচ তার কাছ থেকে আইনী সহায়তা নিয়ে আদালতপাড়ায় দাড়িয়েই মিডিয়ায় সাখাওয়াত বিরোধী বক্তব্য দেন অনেক নেতা।

এই যেমন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে তিন দফায় নিজ খরচে হাইকোর্ট থেকে জামিন করিয়েছিলেন এড. সাখাওয়াত। এটিএম কামাল বিভিন্ন সময়ে স্বীকারও করেছেন এ কথা। এমনও হয়েছে সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হতে এবং সাখাওয়াতের মাধ্যমে জামিন নিয়ে বিকালে গিয়ে স্বাক্ষর করেছেন সাখাওয়াত হোসেন খানকে বহিস্কারের সুপারিশে। কতটা অকৃতজ্ঞ হলে একটা মানুষ এমনটা করতে পারে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

এছাড়াও বিগত সময়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে উত্তাল ছিলেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। পুলিশের হামলা মামলা উপেক্ষা করে মিটিং মিছিলে নিয়মিত নারায়ণগঞ্জের রাজপথ উত্তপ্ত রেখেছিলেন তিনি, আর এ জন্য জেলও খাটতে হয়েছে মাসের পর মাস। কিন্তু জেল জুলুম কোন কিছুই তাকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন থেকে টলাতে পারেনি, নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলন সংগ্রাম চলমান রেখেছেন।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালাম দলের চরম দূর্যোগপূর্ণ গত এক বছরের বেশীরভাগ সময়ই ছিলেন অসুস্থ। কখনও হাসপাতালে আবার কখনোবা নিজ বাড়িতেই ছিলেন চিকিৎসাধীন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামেননি তিনি। সেই সাথে কালাম পন্থী অনেক বিএনপি নেতা নির্বাচনে প্রকাশ্যে ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। কালামের ভাই মহানগর বিএনপি’র সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলসহ কালাম অনুসারী মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত হাশেম শকু, দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার, বিএনপি নেতা জমসের আলী ঝন্টু, গোলাম নবী মুরাদ, সুলতান আহমেদ, এনায়েত হোসেন, সামসুজ্জোহা, কামরুজ্জামান বাবুল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মহাজোট প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেন। অথচ সেই লাঙল মার্কা বিএনপি নেতাদের হেফাজতে রেখে রাজপথের সংগ্রামী নেতা এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত গৃহবন্দি নেতারা। তাই মহানগর বিএনপি এখন সাখাওয়াতে ভর করে “ওয়ান ম্যান শো” হয়ে গেছে- এমনটিই অভিমত তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ