সোনারগাঁয়ে খাল কেটে কুমির আনছেন মান্নান!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র কমিটি গঠন করতে গিয়ে খাল কেটে কুমির আনছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান- এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদরা। কারণ গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন মান্নান। আগামীতেও সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি কিন্তু থানা বিএনপি’র কমিটি গঠন করতে গিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এর ফাঁদে পা দিয়েছেন তিনি। কারণ অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সোনারগাঁ আসন থেকে নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিটি গোছাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সোনারগাঁ বিএনপিতে এখন একক আধিপত্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নানের। মান্নান চাইছেন তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে সোনারগাঁ বিএনপি’র কমিটি সাজাতে। এ লক্ষ্যে তিনি প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিনিয়োগও করেছেন। এর মাধ্যমে সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদটি নিশ্চিত করেছেন মান্নান কিন্তু মান্নানের পছন্দের লোককে সদস্য সচিব করতে পারছেন না। মান্নান চাইছেন কাঁচপুর বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমিকে সদস্য-সচিব বানাতে কিন্তু মান্নানের সেই ইচ্ছায় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত সময়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনাকারী বিতর্কিত বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেনকে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সদস্য সচিব বানাতে চাইছেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। বর্তমানে হেফাজতের মামলায় আসামি হয়ে পলাতক মামুন মাহমুদ নাকি এই মোশারফের বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেইসাথে মোশারফকে থানা বিএনপির সদস্য সচিব বানাতে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যদিও সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা কিন্তু ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও শিল্পপতি মোঃ শাহআলম থাকায় সেখানে বেশি একটা সুবিধা করতে পারেন না। তাই আগামীতে সোনারগাঁ থেকে সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্য স্থির করেছেন এবং সে লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজের পছন্দমত লোকজনকে থানা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করছেন।

এদিকে, সোনারগাঁ বিএনপি’র বর্তমান নিয়ন্ত্রক আজহারুল ইসলাম মান্নান আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কাঁচপুরের সেলিম হক রুমিকে থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব পদে নিয়ে আসতে। আর সেজন্য থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম টিটুকে দায়িত্ব দিয়েছেন সেলিম হকের জন্য দেনদরবার করতে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে নজরুল ইসলাম টিটু সেলিম হকের বদলে মোশারফের জন্য নানান জায়গায় ছোটাছুটি করছেন। আর তাই শেষ মুহূর্তে সেলিম হক রুমির কপাল পুড়তে পারে এই টিটুর জন্যেই।

অপরদিকে কাঁচপুর বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমিকে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সোনারগাঁ বিএনপি’র একক নিয়ন্ত্রণ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান। কিন্তু বিএনপি নেতা সেলিম হক রুমীর বিষয়ে বিতর্কের শেষ নেই সোনারগাঁয়ে। সেলিম হক রুমীর আপন ছোট ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছিলেন আরো দু’বছর আগে। তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এসব কারণে আজারুল ইসলাম মান্নানের সাথে সেলিম হক রুমির মাঝে ছিল বিশাল রাজনৈতিক দূরত্ব। দুজনের মাঝে ছিল রীতিমতো শত্রুতার সম্পর্ক। জাতীয় পার্টির সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলার কারণে সেলিম হক রুমিকে খুব একটা পছন্দ করতেন না মান্নান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কোন এক অদৃশ্য ইশারায় পুরো দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। শত্রুপক্ষের সেলিম হক হয়ে পড়েন আজহারুল ইসলাম মান্নানের প্রিয়ভাজন। সেলিম হককে থানা বিএনপি’র শীর্ষ পদে আনতে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগও করেছেন মান্নান- এমনটাও শুনতে পাওয়া যায়।

অথচ সেলিম হক রুমির ভাই হানিফ হক জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকৎ হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে সে সময়ে স্থানীয় সোনারগাঁয়ের একটি অনলাইনকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেছিলেন, যারা বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন, দলের জন্য তাদের কোন অবদান ছিলনা, তারা সংস্কার পন্থী। এসব সংস্কার পন্থীরা সরে গেলে বিএনপির কোন ক্ষতিও হবে না ইনশাহআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ