নারায়ণগঞ্জ মেইল: চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ইস্যুতে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের নাশকতার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় ১৬ টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা ছাড়াও আসামি করা হয় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও এবং সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢালাওভাবে আসামি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর হেফাজতের এসব মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস যাবৎ পলাতক জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। ঘরবাড়ি পরিবার পরিজন ছেড়ে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এসব বিএনপি নেতাকর্মীরা। তাদের অনেকের সংসারেই দেখা দিয়েছে চরম দুর্ভোগে। উচ্চ আদালতে আগাম জামিন বন্ধ থাকায় তারা ঘরেও ফিরতে পারছেন না। এমতাবস্থায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের,মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদের পরিবারের লোকজন। এমনকি মায়ের মৃত্যুর পর তার দাফনে অংশ নিতে পারেননি ছেলে এই মামলার আসামি হওয়ার কারণে।
জানা যায়, হেফাজতের হরতাল ও সোনারগাঁয়ে মামুনুল হকের রিসোর্ট কান্ডে তিন থানায় মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। ২৮ মার্চ হরতালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ও সাইনবোর্ডে ব্যাপক নাশকতা চালায় হেফাজত কর্মীরা। এ ছাড়া গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হক নারীসহ অবরুদ্ধের ঘটনার পর সোনারাগাঁয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় হেফাজত কর্মীরা। এ দুটি ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় আটটি, সিদ্ধিরগঞ্জে সাতটি ও রূপগঞ্জে একটি মোট ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পরিবহন মালিকরা।
এসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিএনপির সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, আব্দুল হাই রাজু, বারদী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরকার, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মমতাজউদ্দীন মন্তু, সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ মোল্লা, নুর এ ইয়াসিন নোবেল, সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের ছেলে কাউন্সিলর জিএম সাদরিলসহ প্রায় শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের দিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, ওই রিসোর্ট ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এনে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে। ১৬ মামলায় বেশ কয়েকটিতে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজতের আরও কয়েকশ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অন্তত ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।