নারায়ণগঞ্জ মেইল: সারা বছর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় দেখ না মিললেও নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল গঠনের সময়ে এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও এড. আবুল কালাম ঠিকই হাজির থাকতেন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আইনজীবীদের সব সময়ের অভিভাবক এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্যানেল ঠিক করতেন। কিন্তু গত দুই বছর যাবত এড. তৈমূর আর এড. আবুল কালামের আর দেখা মিলছে না নির্বাচনের মৌসুমে। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ইতিহাসে বিএনপির আইনজীবীদের সবচেয়ে কঠিন দুরবস্থাতে বেমালুম গায়েব হয়ে গেলেন তারা। গত দুই বছরের মতো এবারেও দু:সময়ে বিএনপির আইনজীবীদের হাল ধরেছেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। সিনিয়র জুনিয়র সবাইকে নিয়ে এবারেও একটি প্যানেল দাড় করিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, তারা তিনজনই নারায়ণগঞ্জের প্রথিতযশা আইনজীবী. সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অভিভাবক পর্যায়ের নেতা। একজন হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. তৈমূর আলম খন্দকার আর অপর দুজন হলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. আবুল কালাম ও সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবী নেতা হলেও তাদের প্রথম দুজনকে খুব কমই দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায়। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা কিংবা বিএনপির আইনজীবীদের দূর্ভোগ দূর্যোগে তৈমূর কিংবা কালাম কখনো এগিয়ে আসেন না। আদালতপাড়ায় বিএনপির প্রতিবাদ প্রতিরোধে একজনই বারবার এগিয়ে আসেন এবং রুখে দাড়ান আর তিনি হলেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়নগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা হামলা মোকাবেলায় আদালতপাড়ায় একটি বিশ্বস্ত ঠিকানা হলো এড. সাখাওয়াত। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে বিএনপির আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়েও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিনিই। এতো ভারি ভারি নামের আইনজীবী নেতা নারায়ণগঞ্জে থাকলেও বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা তাদের দু:সময়ে এদেরকে খুঁজে পাননা। শেষ পর্যন্ত সেই সাখাওয়াতই তাদের পাশে দাড়িয়ে প্রতিবাদে মূখর হয়ে উঠেন, দুরবিন দিয়ে খুঁজেও কোথাও দেখা মিলেনা তৈমূর কিংবা কালামের।
সূত্র জানায়, গত দুই বছরের বার নির্বাচনের আগেও খুবই সংকটকাল অতিবাহিত হয়েছে বিএনপির আইনজীবীদের। আওয়ামীলীগের দাপটে কেউ প্রার্থীই হতে চাচ্ছিলেন না। সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এড. জাকির হোসেন। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় এড. জাকিরের গ্রহনযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা তাকে বিএনপির একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে অজানা কারনে তিনি প্রার্থী হতে অনীহা প্রকাশ করেন। সেই সাথে অন্যান্য পদগুলোতেও প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত ১৭টি পদে প্রার্থী দিতে পেরেছিলো কোনমতে। এই ক্রান্তিকালেও বিএনপির আইনজীবীদের পাশে দেখা মিলেনি এড. তৈমূর আলম খন্দকার কিংবা এড. আবুল কালামের। আইনজীবী নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান মোটামোটি একটি প্যানেল দাড় করান। এবারে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
এছাড়াও গত এক যুগেরও বেশী সময় ক্ষমতার বাইরে থাকায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলা হামলায় দিশেহারা অবস্থা। আর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলাগুলো বিনা পয়সায় পরিচালনার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। প্রতিদিনই আদালতপাড়ায় গেলে দেখা যায় কোন না কোন বিএনপি নেতা কিংবা কর্মী হাজিরা দিচ্ছেন আর এড. সাখাওয়াতও আন্তরিকতার সাথে তা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি কোন বলয় কিংবা পক্ষ বিপক্ষ বিবেচনা করেন না। অনেক বিএনপি নেতাকে দেখা গেছে এড. সাখাওয়াতের সাথে হাজিরা দিয়ে এসে মিডিয়ার কাছে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। নিজের টাকায় জামিন করিয়েছেন যে বিএনপি নেতাকে, সেই সকালে হাজিরা দিয়ে বিকালে গিয়ে এড. সাখাওয়াতের বহিস্কারের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। তবুও নিরলসভাবে আইনী সেবা দিয়ে চলেছেন তিনি। আর এখানেও দেখা মিলেনা দুই সিনিয়র আইনজীবী নেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার কিংবা এড. আবুল কালামের। তাদের দুইজনের আইনী সহায়তা থেকেও বঞ্চিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির হতভাগ্য নেতাকর্মীরা।