বার নির্বাচন: তৈমূর অনুসারীদের রহস্যজনক অনুপস্থিতি

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে দলীয় প্যানেল চুড়ান্ত করতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসার কথা ছিলো বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের। বারের সাবেক সভাপতি এড. বারী ভূইয়ার চেম্বারে দুপুরে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এড. তৈমূর অনুসারীরা সেই বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় ভেস্তে যায় প্যানেল গোছানো নিয়ে তাদের আলোচনা। এড. তৈমূর আলম খন্দকারের নির্দেশেই তার অনুসারী আইনজীবীরা সে বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামীলীগকে ওয়াক ওভার দিতে তৈমূরের এমন সিদ্ধান্ত বলে গোঁপন সূত্রে জানা গেছে। একটি বিশেষ মহলের সাথে সমঝোতার কারনে এবার আওয়ামীলীগ প্যানেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত করার মিশন বাস্তবায়ন করতে চাইছেন-এমনটাই জানিয়েছেন ক্ষুব্দ আইনজীবীরা।

বুধবার ১৩ জানুয়ারি নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে যখন বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা প্রার্থী বাছাই করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন, তখনও কোথাও দেখা মিলেনি এড. তৈমূর আলম খন্দকারের অনুসারী এড. আবদুল ভাষানী. এড. আজিজ আল মামুন, এড. নুরুল আমিন মাসুম, এড. রাসেল সিরাজি, এড. শরিফুল ইসলাম শিপলুকে। আদালতপাড়ায় তাদের অনুপস্থিতি দেখে নানা রকম মুখরোচক গল্প শোনা যাচ্ছিলো আইনজীবীদের মুখে। অনেকে বলছিলো এবার নির্বাচনের আগেই ম্যানেজ হয়ে গেছেন এড. তৈমূর। সরকারী দলের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে নিজ অনুসারীদের সরিয়ে রেখেছেন নির্বাচনী তৎপরতা থেকে।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীদের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন হয়ে থাকে মুলত: জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মাধ্যমে। বিএনপির আইনজীবীদের এই সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ বহু পুরানো। তাই এবার সকল আইনজীবীর মতামতের ভিত্তিতে গণতান্ত্রীক পদ্ধতিতে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি এড. তৈমূর আলম খন্দকার অনুসারী আইনজীবীরা। কারন আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের মাঝে তাদের গ্রহনযোগ্যতা প্রায় শূণ্যের কোঠায়। তাই ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে তাদের ভরাডুবির সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে নির্বাচন ঠেকানোর কৌশল খুঁজতে থাকেন তারা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার বিএনপির সিংহভাগ আইনজীবী নির্বাচনের পক্ষে থাকায় তাদের সে চেষ্টা ভেস্তে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচনে এড. সাখাওয়াত অনুসারী প্যানেলের বিপরীতে এড. তৈমূর আলম খন্দকার প্রার্থী নির্ধারণ করে। সাখাওয়াত অনুসারী প্যানেলের প্রার্থীরা ছিলেন সভাপতি পদে এড. সরকার হুমায়ুন কবীর, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. আবুল কালাম আজাদ জাকির, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এড. আজিজুল হক হান্টু, যুগ্ম সম্পাদক পদে এড. এইচএম আনোয়ার প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এড. ওমর ফারুক নয়ন।
অপরদিকে তৈমূর অনুসারী প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন সভাপতি পদে এড. আব্দুল হামিদ ভাষানী, সাধারণ সম্পাদক পদে এড. আজিজ আল মামুন, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এড. সীমা সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক পদে এড. আনিসুর রহমান মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আলী হোসেন।

উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া সে নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে এড. তৈমূর আলম খন্দার অনুসারী প্যানেলের। ৫টি পদের সবকটিতে বিপুল ব্যবধানে তাদেরকে পরাজিত করে জয়ের মালা ছিনিয়ে নেয় এড. সাখাওয়াত অনুসারীরা। এরপর থেকেই তৈমূর অনুসারী গুটিকয়েক আইনজীবী সুযোগ খুঁজতে থাকে আদালতপাড়ায় বিএনপিকে হেনস্তা করার। এবার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সে মিশন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন তারা। তৈমূরের নির্দেশে তার সুযোগসন্ধানী অনুগামীর দল এবার আদালতপাড়ার আওয়ামীলীগের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্বাচন থেকে দুরে সরে থাকতে চাইছে যাতে করে সরকারী দলের প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে পারে সেইসাথে সাখাওয়াত শিবিরকে বিতর্কিত করতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মিশনে রয়েছেন এড. তৈমূর ও তার অনুসারীরা।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ