নারায়ণগঞ্জ মেইল: দীর্ঘবছর নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীকে জিম্মি করে সর্বমহলে একক রাজত্ব চালিয়েছিল ওসমান পরিবার। ওসমান পরিবারের ভয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী যখন চুপ ছিল তখন তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। আইভীর প্রতিবাদ সাড়া দেশ জুড়ে প্রশংসিত হয়েছিল। আওয়ামীগ সরকার পতনের পরও আইভী তার বাড়িতেই অবস্থান করা হলেও গত ৯ মে ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জবাসী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলেন আইভী। সেই প্রতিবাদী আইভী কারাগারে থাকলেও ওসমান ঘনিষ্টরা এখনো বহাল তবিয়তে থেকে বড় বড় পদ দখল করে রেখেছে।
ওসমান পরিবারের অন্যতম ঘনিষ্ট ছিলেন মোহাম্মদ হাতেম, মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, মোরশেদ সারোয়ার সোহেলসহ অনেকে। যারা আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আরো দাপুটে হয়ে উঠেছেন।
সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর গত ৮ মে পর্যন্ত নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। এমনকি গত ১৫ আগস্ট ২নং রেল গেইটে আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে শেখ মজিবুরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেও নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পরবর্তিতে ৯ মে ভোর পৌনে ৬টায় সেলিনা হায়াত আইভীকে গ্রেফতার করে করে পুলিশ। এর আগে দিবারাত ১১ টায় সাবেক মেয়রকে আটক করতে দেওভোগে অবস্থিত চুনকা কুটিরে অভিযান চালায় তারা। রাতভর এলাকাবাসী ও সমর্থকদের বাধায় বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
আইভী যখন কারাগারে তখন নিট পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) বিনা ভোটে সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদ হাতেম। যিনি সেলিম ওসমান সভাপতি থাকাকালীস সময়ে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি পদে ছিলেন। একই সাথে গণহত্যার উস্কানী দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়িয়ে ব্যক্তব্য দিয়েছিলেন হাতেম। মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে ৩৫ জনের প্যানেলের ২০ জনই ছিলেন সেলিম ওসমানের প্যানেলের।
বিকেএমইএ’র সহ- সভাপতি ( অর্থ) ও জলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হয়েছেন মোরশেদ সারোয়ার সোহেল। মোরশেদ সারোয়ার সোহেল ছিলেন ওসমান পরিবারের ঘনিষ্টজনদের মধ্যে অন্যতম। মোরশেদ সারোয়ার সোহেল বিগত দিনে ওসমান পরিবারের প্রভাবকে খাটিয়ে বিপুল অথর্ বিত্তের মালিক বনেছেন।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। যিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন ছিলেন। এমনকি শামীম ওসমানের পরিবারকে দেশ ত্যাগে সহযোগীতার অভিযোগসহ শামীম ওসমানের ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে। শামীম ওসমান আত্মগোপনে যাওয়ার আগে সর্বশেষ যে বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই বাড়িটি মালিক ছিলেন দিপু ভূইয়া।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন আমরা ওসমান পরিবারের কাছে জিম্মি ছিলাম। ৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম এবার হয়তো স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবো। কিন্তু তা আর হল না। ওসমানরা ভেগে গেলেও তাঁদের প্রেআত্মারা রঙ বদলাচ্ছে। তারাই আবার ব্যবসায়ী ও উদ্যেক্তাদের জিম্মি করে আগের মতোই তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওসমান ঘনিষ্টরা শীর্ষ ব্যবসায়ী দুটি সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করছেন। অথচ ওসমান পরিবারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি প্রতিবাদ করেছেন সেই সেলিনা হায়াত আইভী কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।