সরে যাচ্ছেন রাজীব, হেরে যাচ্ছে গণতন্ত্র

নারায়ণগঞ্জ মেইল: সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন মাসুকুল ইসলাম রাজিব। এতে করে সভাপতির মত সাধারন সম্পাদক পদেও কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে রাজিবের সরে দাঁড়ানোর কথা জানা গেলেও মূলত দিপু ভুঁইয়ার টাকার কাছে কেন্দ্রীয় নেতারা বিক্রি হয়ে যাওয়ায় রাজীব এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করছে তৃণমূল। এদিকে রাজীবের এই সিদ্ধান্তে ভেঙ্গে পড়েছে তার কর্মী সমর্থকরা‌। তাদের মাঝে কান্নার রোল উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে তুমুল জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতা সম্মেলনের প্রার্থিতা থেকে সরে আসায় তার ভক্তবৃন্দের মাঝে বিরাজ করছে আর্তনাদের সুর, সেই সাথে বুকভাঙ্গা বেদনা আর চাপা অসন্তোষ। তৃণমূল মনে করে সারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি যে আন্দোলন করছে, নারায়ণগঞ্জে এসে সেই গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে টাকার কাছে হেরে গেল গণতন্ত্র‌।

এদিকে রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একের পর এক নাটকীয়তা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুকুল ইসলাম রাজীব প্রার্থী হওয়ায় পর থেকেই তাকে ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে রূপগঞ্জের গাউছিয়া মার্কেটের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু। কখনো নিজের প্রতিপালিত লোকজন দিয়ে রাজিবের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন, কখনোবা ভুয়া অভিযোগে রাজিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠাচ্ছেন‌ ভোটারদেরকে বিভ্রান্ত করে রাজীবের বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে নিজের গৃহপালিত নেতা নিষ্ক্রিয় নেতা গোলাম ফারুক খোকনকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বানাতে চাইছেন দিপু।

 

তৃণমূলের মতে, গোলাম ফারুক খোকন রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। তিনি এতদূর এসেছেন দীপু ভুঁইয়ার কাঁধে চড়ে। খোকন হচ্ছে জেলা বিএনপিতে দীপু ভুঁইয়ার ড্যামি প্রার্থী। রূপগঞ্জের রাজনীতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে চলেন দিপু ভূঁইয়া। আর তাই তিনি এবং তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বললেই চলে আর জেলখানার চার দেয়ালে কখনোই বন্দি থাকতে হয়নি দীপু ভূঁইয়া কিংবা গোলাম ফারুক খোকনকে।

 

খোকনের উপর ক্ষুব্দ নেতাকর্মীদের মতে, গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এসময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে খুব একটা দেখা মিলেনি গোলাম ফারুক খোকনের। বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর টাকার জোরে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন খোকন। সেই নেতার আশীর্বাদেই হয়েছিলেন যুবদলের আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ন পদ।

 

অপরদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের রয়েছে বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতির আইকন ধরা হয় রাজীবকে। সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাসুকুল ইসলাম রাজীবের আছে বিশাল এক কর্মী বাহিনী, যাদেরকে নিয়ে বিগত সময়ে রাজপথে আন্দোলনের ঢেউ তুলেন রাজিব। আর এসব কারণে সরকারি দল ও পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন রাজিব। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার আসামি রাজিব জেল খেটেছেন অসংখ্যবার। এতো কিছুর পরেও রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি বরং আরো বলিষ্ঠ হয়ে ফিরে এসেছেন। আর তাই রাজিবের মত সাহসী আর কর্মীবান্ধব নেতাকেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম পছন্দ ছিলো মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ