নিষ্ক্রিয় খোকন বনাম সংগ্রামী রাজিব, উৎকণ্ঠায় তৃণমূল

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আগামী ১৭ জুন অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ঘিরে তৃণমূলে বইছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার ঢেউ। আর এই কৌতূহলের পুরোটা জুড়েই রয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। সভাপতি পদে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবেক এমপি মোঃ গিয়াসউদ্দিন বিজয়ী হয়ে যাওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদে কে হবেন বিজয়ী সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে ব্যস্ত এখন তৃণমূল। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক পদের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম ফারুক খোকন ও মাসুকুল ইসলাম রাজীবের বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন নেতাকর্মীরা। আর এসব বিশ্লেষণে উঠে এসেছে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী খোকনের নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি রাজিবের সদা সংগ্রামী ভূমিকা। আলোচনায় স্থান পাচ্ছে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা ও কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তার বিষয়টিও।

 

তৃণমূলের মতে, গোলাম ফারুক খোকন রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। তিনি এতদূর এসেছেন দীপু ভুঁইয়ার কাঁধে চড়ে। খোকন হচ্ছে জেলা বিএনপিতে দীপু ভুঁইয়ার ড্যামি প্রার্থী। রূপগঞ্জের রাজনীতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে চলেন দিপু ভূঁইয়া। আর তাই তিনি এবং তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বললেই চলে আর জেলখানার চার দেয়ালে কখনোই বন্দি থাকতে হয়নি দীপু ভূঁইয়া কিংবা গোলাম ফারুক খোকনকে।

 

খোকনের উপর ক্ষুব্দ নেতাকর্মীদের মতে, গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এসময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে খুব একটা দেখা মিলেনি গোলাম ফারুক খোকনের। বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর টাকার জোরে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন খোকন। সেই নেতার আশীর্বাদেই হয়েছিলেন যুবদলের আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ন পদ।

 

অপরদিকে আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের রয়েছে বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতির আইকন ধরা হয় রাজীবকে। সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাসুকুল ইসলাম রাজীবের আছে বিশাল এক কর্মী বাহিনী, যাদেরকে নিয়ে বিগত সময়ে রাজপথে আন্দোলনের ঢেউ তুলেন রাজিব। আর এসব কারণে সরকারি দল ও পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন রাজিব। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার আসামি রাজিব জেল খেটেছেন অসংখ্যবার। এতো কিছুর পরেও রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি বরং আরো বলিষ্ঠ হয়ে ফিরে এসেছেন। আর তাই রাজিবের মত সাহসী আর কর্মীবান্ধব নেতাকেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম পছন্দ মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের।

 

প্রসঙ্গত, ১৭ জুন শনিবার সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সম্মেলন। সম্মেলনে সকাল ১০টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে ভোট দেবেন ১ হাজার ১০ জন কাউন্সিলর। পুরো প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৪ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

 

তবে জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন। সাধারণ সম্পাদক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভবনা রয়েছে।

 

কাউন্সিলকে সফল করতে গঠন করা হয়েছে ৬টি উপ- কমিটি। কাউন্সিলে ১০১০ জন কাউন্সিলর ভোট দেবেন ও বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১৫০০ ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। কাউন্সিলে আমন্ত্রণ জানানো হবে আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার অন্তত ১শ জন অতিথিকে।

 

এর আগে ২০০৩ সালে শহরের চাষাড়ায় বিএনপির ক্ষমতাকালীন জিয়া হলে দলের কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক হন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এড. তৈমূর আলম খন্দকার ও সিনিয়র সহ-সভাপতি হন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও তৎকালীন সংসদ সদস্য মোঃ গিয়াসউদ্দিন।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ