নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিতর্ক ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। তিনমাসের জন্যে গঠিত আহবায়ক কমিটি নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে দেড় বছর যাবত বহাল রয়েছে। বিশেষ করে ফতুল্লা থানা কমিটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছে তারা। ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে থানার সম্মেলন আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটি বাতিল করে দিয়েছে জেলা বিএনপি অথচ গত আটমাসে একটি ইউনিয়ন কমিটি কমিটি চুড়ান্ত করতে না পারলেও ফতুল্লা থানা কমিটির বিরুদ্ধে কোনো একশনে যাচ্ছেন না তারা যা তৃণমূলের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল মনে করে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটির অন্তরালে থাকা রাঘব বোয়ালদের ভয় পায় জেলা বিএনপির নেতারা। আর তাই ব্যর্থ এই কমিটি এখনো বাতিল করছেন না তারা।
সূত্রে প্রকাশ, গত ১০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অন্তর্গত ১০টি ইউনিটের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। ঘোষিত এই ১০টি কমিটির প্রতিটি নিয়েই বিতর্ক ছিলো। তবে এই বিতর্কের মাঝেই বিভিন্ন থানা এবং পৌর কমিটিগুলোকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করে নিজেদের সম্মেলন আয়োজন করার। এরই মাঝে সোনারগাঁ থানা ও সোনারগাঁ পৌরসভা এবং আড়াইহাজার থানা, আড়াইহাজার পৌরসভা ও গোপালদী পৌরসভার সম্মেলন শেষ করেন। এমনকি তারা নিজেদের সম্মেলনও সমাপ্ত করে কমিটি গঠন করে ফেলেছে। কিন্তু বাকি ৫টি ইউনিটের অবস্থা খুব একটা সুবিধের না। এদের মধ্যে ফতুল্লা থানা এখনো পর্যন্ত একটি ইউনিয়ন কমিটিও গঠন করতে পারেনি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা তাদের সম্মেলন আয়োজনের দিনক্ষণ ঠিক করে সভা শুরু করতে চেয়েছিলো কিন্তু নিজেদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সে সম্মেলন আয়োজন ভেস্তে যায়। এরপর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটি বাতিল করে দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ইউনিট কমিটি হলো ফতুল্লা থানা আর এখানেই বিএনপির সবচেয়ে বেশি বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কমিটি ঘোষনার পর প্রায় আট মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত শীর্ষ দুই পদের অধিকারী আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেল ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম টিটুর মাঝে সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এই বিভক্তির গ্যারাকলে আটকে আছে। এ কারণে জেলা বিএনপির অন্যান্য থানা কমিটিগুলো ইউনিয়ন কমিটি চুড়ান্ত করে ফেলেছে। অনেকে থানার সম্মেলনও শেষ করেছে কিন্তু ফতুল্লা থানা বিএনপির অন্তর্গত একটিও ইউনিয়ন কমিটি ঘোষনা সম্ভব হয়নি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফতুল্লা থানা বিএনপিতে আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেল ও সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম টিটুর মাঝে চলমান দ্বন্দ্ব চরম আকার ধাারন করেছে। স্থানীয় কর্মসূচিগুলি তারা আলাদা আলাদাভাবে পালন করছে। একসাথে তাদের দুইজনকে ফতুল্লায় কর্মসূচি পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও এই বিভক্তি প্রকাশ পেয়েছে। তাদের দুইজনের এই দ্বন্দ্বের কারনে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। কারন তারা কোনো ভাইয়ের রাজনীতি করতে চায় না, তারা চায় শহীদ জিয়ার আদর্শে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি করতে কিন্তু শীর্ষ দুই নেতার বিভক্তি তাদেরকেও বিভক্ত করে ফেলছে বলে ক্ষোভ তৃণমূলের। এ জন্যে তারা জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই বিরোধ নিরসন করে ঐক্যবদ্ধ ফতুল্লা থানা বিএনপির গতিশীল কার্যক্রম দেখতে চায়।