শামীম-আইভীর দ্বন্দ্ব নাকি রাজনীতির কৌশল!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: ত্বকী হত্যা, রাজাকার পুত্র ইস্যু, আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠার স্থান, সম্পদের বৈধতা, বিএনপি নেতাদের সাথে আতাঁতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ একেএম শামীম ওসমান। যদিও আপাতত রাজাকার পুত্র ইস্যু নিয়ে দুইজনের দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। তাদের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে দলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাবে তাদের এই দ্বন্দ্বকে নিছক নাটক বলেও মন্তব্য করেছেন একটি মহল।

তাদের মতে, রাজনীতির মাঠ চাঙ্গা রাখতে শামীম-আইভীর প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব চলমান আছে। সমালোচকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মেয়র আইভী ও শামীম ওসমানের দ্বন্দ্ব চলছে তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যে কোন ইস্যুতে তারা দ্বদ্বে জড়িয়ে পড়লেও কিছুদিন পরই সেই ইস্যু নিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে পড়েন তারা। যদিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা দুইজনই একাধিকবার দাবী করেছেন তাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। যা আছে তা হল রাজনৈতিক প্রতিযোগীতা। সর্বশেষ রাজাকার ইস্যুতে শামীম-আইভীর তর্ক শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জে কুখ্যাত রাজাকার গোলাম রাব্বানীর পক্ষে জেলা প্রশাসকের বরাবর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির কিংমেকার হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলীর সাথে মেয়র আইভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধো যে না বানানো হয় এজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন মেয়র আইভী। তবে একবারও তিনি মোহাম্মদ আলীর নাম উচ্চারণ করেননি। যা নিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে মোহাম্মদ আলীর বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। মোহাম্মদ আলী কোথায় ও কখন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। এদিকে, শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ।

টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকারে পরও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতারা ঐক্য হতে পারেনি। বরং দিন দিন ক্ষমাসীনদের অনৈক্য বেড়েই চলছে। উত্তর-দক্ষিণ মেরু দ্বন্দ্বের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও উত্তরের চেয়ে দক্ষিণের দাপট দিন দিন বাড়ছে। সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নেতাদের কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় কর্মীরাদের মাঝে হতাশা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে চলছে চরম অস্থিরতা। দলের দু:সময়ে যে সকল নেতাকর্মীরা দলের স্বার্থে কাজ করেছেন সেই সকল নেতারাই এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। একই সাথে দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা আঙ্গুল ফুলে কলাগছ হয়েছে। এক সময় যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরতো এখন তাদের অনেকেরই জীবনের পট পাল্টে গেছে। বিলাশ বহুল গাড়ি আর আলিশান বাড়িতে বসবাস করছেন। তাদের অবস্থার পরিবর্তণে মনে হচ্ছে ক্ষমতার পুরো সুবিধা তারাই ভোগ করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতা এখনো ক্ষমতান স্বাদ ভোগ করতে পারেনি। ভাগ্যের পরিবর্তণ ঘটেনি তাদের। যদিও শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে অনেক নেতাই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, আসলেই কি তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে নাকি তা রাজনৈতিক অভিনয়।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ