উত্তরের হাওয়া দক্ষিণে!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুই ভাগে বিভক্ত। উত্তর-দক্ষিণ মেরুর রাজনীতিতে দীর্ঘদিন উত্তর মেরুর আধিপত্য থাকলেও সেই হাওয়া এখন দক্ষিণ দিকে বইতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। দিন যতই যাচ্ছে দক্ষিণ মেরু তথা নারায়ণগহঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে গত সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইভীর অবস্থান আরো পোক্ত হয়েছে। স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের গুড বুকেও ঢুকে পরেছেন সিটি মেয়র আইভী। সর্বশেষ ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্চে একটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে মেয়র আইভীর প্রশংসা করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিরেন, আইভী আমাদের গর্ব।

এরআগে নাসিক নির্বাচনী চলাকালীন সময়ে আইভীকে বিজয়ী করতে কেন্দ্রীয় নেতারা বেশ তৎপর ছিলেন। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের খোঁজ খবর রেখেছিলেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই নির্বাচনী পরবর্তি সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কদর বেড়েছে মেয়র আইভীর। এছাড়াও নির্বাচন চলাকালীন সময়ে মহানগর ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছিল। যা একক ভাবে নিয়ন্ত্রন করছেন উত্তর মেরু তথা সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। তবে আগামী কমিটিগুলোতে সাংসদ শামীম ওসমানের একক নিয়ন্ত্রন না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবস্তর নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র পদে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়ে নিজের জনপ্রিয়তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁকে ঘিরে দল সাজাতে পারলে দল শক্তিশালী হবে।

সূত্র বলছে, ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রণে। ২০১১ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ার পর থেকে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের দাপট কমতে থাকে। তবে দলীয় কমিটিগুলোতে এখনো শামীম ওসমানের অনুসারীদের প্রাধান্য রয়েছে। তাই এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে শুরুতে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর তৎপরতা চোখে পড়েনি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নেতা আইভীর পক্ষে তৎপর ছিলেন। শেষের দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে শামীম ওসমানের অনুসারী নেতারা ‘লোকদেখানো’ কিছু তৎপরতা দেখান বলে সিটি নির্বাচন তদারককারী কেন্দ্রীয় নেতারা জানান। তবে আগের দুবারের মতো এবারও ওসমান পরিবার বা তাদের অনুসারীদের সহযোগিতা ছাড়াই আইভী বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। আইভীর এই বিজয়ে একদিকে তাঁর ব্যক্তি জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে এটাকে নারায়ণগঞ্জে পেশিশক্তি বা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির পরাজয় হিসেবে দেখছে মানুষ। এই পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবস্তরের কমিটি নতুন করে সাজানোর প্রয়োজন মনে করছেন দলটির নেতারা। যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের কমিটিও ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সংগঠনের মূল কাঠামো। এই দুই কমিটি ভাঙার রেওয়াজ কম। তাই সম্মেলনের মাধ্যমেই এই দুই কমিটি পুনর্গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ