নারায়ণগঞ্জ মেইল: সরকার বিরোধীদের প্রশ্রয় আর লালন পালনের অভিযোগ সিটি মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে বহু পুরানো। সেই পুরানো আগুন আবারো নতুন করে জ্বলে উঠেছে। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউসার আশার সাথে মেয়র আইভী বলয়ের ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠতা পূর্নরূপে প্রকাশ পেয়েছে বৃহস্পতিবার ৩১ মার্চ বন্দরে শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনির অনুষ্ঠানে। সে অনুষ্ঠানে বিশাল শোডাউন করে যোগ দিয়েছেন বিএনপি নেতা আশা। শুধু তাই নয় পুরো অনুষ্ঠানেই মঞ্চে মন্ত্রীর পিছনে দাড়িয়ে ছিলেন।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, সমর্থকরা বলে থাকেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর মেয়র আইভী। তার কোন সন্ত্রাসী বাহিনী নেই। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তার। খোদ মেয়র আইভীও কথায় কথায় বলে থাকেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’। গত মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রক্কালে সারা বছরের বাজেট ঘোষনাকালে মেয়র বলেছিলেন, ‘মেয়র থাকি বা না থাকি, সন্ত্রাসের বিপক্ষে থাকবো। যতক্ষণ বেঁচে থাকবো ততক্ষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবো’।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ আসলে মেয়র আইভী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে না। তার অবস্থান নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের বিপক্ষে, নিজ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। দলীয় এমপি শামীম ওসমানকে নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে যেসব কথা বলেন, তা দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের শামিল। শুধু শামীম ওসমান না, সুযোগ বুঝে প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলেন মেয়র আইভী। কখনো বলেন তিনি আওয়ামীলীগের লোক, আবার কখনো বলেন নির্দলীয়। এসব কারণে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে দলে তৃনমূল। বিএনপি-জামায়াত ঘেষা আইভীকে এসব কারনে দল থেকে বহিস্কারের দাবিও উঠেছে একাধিকবার।
নগরবাসীর অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শহরের দক্ষিনাঞ্চলের দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান ছিলেন হাসান আহমেদ। দেওভোগ-বাবুরাইল এলাকায় যে বাহিনী এখনো ভয়ানক আতংকের নাম। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ডাবল মার্ডারসহ বহু মামলার আসামী সেই কূখ্যাত সন্ত্রাসী হাসান আহমেদ। আর তার স্ত্রী আফসানা আফরোজ বিভা বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। যিনি মেয়র আইভীর সার্বক্ষনিক সঙ্গী।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর মন্ডলপাড়া ট্রাকস্ট্যান্ড নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে মেয়র আইভী বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয়। ঐ সংঘর্ষে মেয়র আইভীর পক্ষে সিপাহসালারের ভূমিকা পালন করে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হাসান। আইভীর পক্ষ হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কাজ করার পুরস্কার স্বরুপ সন্ত্রাসী হাসানকে সেসময় মন্ডলপাড়া ব্রীজের পাশে সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটের ২য় তলায় পুরো ফ্লোর নামমাত্র মুল্যে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
এছাড়াও শহরের জিমখানা বস্তির কমপক্সে ১০ হাজার মানুষের মাথার ছাদ কেড়ে নেয়ার পিছনে ছিল বিভা হাসানের স্বামী শীর্ষ সন্ত্রাসী হাসান বাহিনীর পেশী শক্তি। মেয়রের পক্ষে সার্বক্ষনিক ভূমিকা রাখা বিএনপির সন্ত্রাসী হাসানের স্ত্রী আফসানা আফরোজ বিভা গত ২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন থেকে কাউন্সিলর হন। সেবার আওয়ামীলীগের প্যানেল মেয়র প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে বিভার পক্ষে কোমর বেঁধে নামার অভিযোগ উঠেছিল মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে। আইভীর তৎপরতায় বিএনপি ক্যাডারের স্ত্রী বিভা প্যানেল মেয়র পদে জয়ী হন। এরপর থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিভাকে কাছে টানেন মেয়র আইভী। বর্তমানে বিভাই মেয়র আইভীর সার্বক্ষনিক সঙ্গী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, বিভা হাসান কে? এটা পুরো শহরবাসী জানে। সে বিএনপি করে, তার পুরো পরিবার বিএনপি করে। এ পরিবার একটি সন্ত্রাসী পরিবার। আর তিনিই কিনা মেয়র আইভীর সার্বক্ষনিক সঙ্গী। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেন সন্ত্রাসীদেও সাথে সখ্যতা রেখে, এ প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? যে সন্ত্রাসের জন্য বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী হাসান বাহিনীকে ঘৃনা করে, অপছন্দ করে, সেই পরিবারকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন মেয়র আইভী। আবার মুখে বলেন তিনি আওয়ামীলীগ। ‘পুরোইটাই ভেলকিবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন নগরীর প্রবীন নাগরিকরা।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে সরকারের ঘোর বিরোধী বাম ঘরানার নেতাকর্মীদের সাথেও সিটি মেয়র আইভীর রয়েছে গভীর সখ্যতা। সকালে শহরের চাষাঢ়ায় দাড়িয়ে সরকারের জাতগুষ্ঠি উদ্ধার করে বিকেলেই আইভীর সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা দেন নারায়ণগঞ্জের বাম নেতারা। এমনকি অআইভীর সাথে একই মঞ্চে দাড়িয়ে আওয়ামীলীগের নেতাদের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে অনেক বাম নেতাদের। আর এসব কারনে সরকার বিরোধীদের প্রশ্রয়ের অভিযোগ আইভীর বিরুদ্ধে প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।