নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অন্যতম ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিলো ফতুল্লা। কিন্তু এখানকার সিনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্বের কারনে আর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় সেই ঐতিহ্য এখন হারাতে বসেছে বলে অভিমত তৃণমূলের। বিশেষ করে স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতা সরকারী দলের সাথে আঁতাত করে চলায় সাধারণ নেতাকর্মীরা পরেছেন বিপাকে। তাছাড়া সরকারী দলের প্রভাব খাটিয়ে বিএনপি নেতারাই অপর বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে শায়েস্তা করছেন। ফলে ফতুল্লায় বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আওয়ামীলীগের চেয়ে বেশী আতঙ্কে থাকেন সেইসব বিএনপি নেতাদের কারনে।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাবেক সাংসদ হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী নেতা মোহাম্মদ আলী বিএনেপির সাইনবোর্ড ঝেরে ফেলেছেন বহু আগেই। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাংসদদের সাথেই তার উঠাবসা আর রাজনীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। গত কয়েকটি নির্বাচনে তিনি সরাসরি আওয়ামীলীগের পক্ষেই কাজ করেছেন। তবুও ফতুল্লা বিএনপির একটি অংশের অলিখিত নিয়ন্ত্রক এই মোহাম্মদ আলী। তাই তার কথামতো সরকারী দলের স্থানীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থেকেই বিএনপির রাজনীতি করতে হচ্ছে তার অনুসারীদের।
ফতুল্লা বিএনপির আরেকটি অংশের নিয়ন্ত্রণ এখনও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের হাতে। আজাদ বিশ্বাস বিএনপির পদ পদবীধারি নেতা হলেও সরকারী দলের সাংসদদের সাথে তার মাখামাখির কথা শুধু ফতুল্লা নয়, সারা নারায়ণগঞ্জের আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেরই জানা। সরকারী দলের নেতাদের তুষ্ট রেখেই তিনি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদ টিকিয়ে রেখেছেন এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। সেই আজাদ বিশ্বাসের অধীনে রাজনীতি করা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে তার মতোই সরকার দলীয় নেতাদের ফাইফরমাশ খেটেই চলতে হয়।
ফতুল্লা বিএনপির একটি বড় অংশ হচ্ছে কুতুবপুর ইউনিয়ন আর কুতুবপুরে বিএনপি চলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর ইচ্ছেমতো। যদিও মনিরুল আলম সেন্টুর পরিচয় এখন আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। এতোকিছুর পরেও সেখানকার বিএনপি এখনও সেই সেন্টুর নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে।
ফতুল্লা বিএনপির আরেক কিং মেকার হচ্ছেন রিয়াদ মো: চৌধুরী। গত ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনিিপ নেতাকর্মীরা যে পরিমান মামলা হামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার বিন্দু পরিমান আঁচও লাগেনি রিয়াদ চৌধুরীর শরীরে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে কোনদিন দেখা মিলেনি তার অথচ ফতুল্লায় কমিটি গঠনের সময় হলে ঠিকই সিন্দাবাদের ভুতের মতো আবির্ভাব ঘটে এবং পদ পদবী বাগিয়ে নেন। আর এসব কিছুর মূূলেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে রিয়াদ চৌধুরীর আঁতাতের ফলেই সম্ভব বলে মত তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের। শুধু তাই নয়, আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে মিলে তার রয়েছে একাধীক ব্যবসা। রিয়াদ চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী যার ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। গত ১৫ বছরে অনেক বিএনপি নেতাকর্মীর বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছেন বিএনপির এই নামধারী নেতা। গত কিছুদিন আগেও স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে হামলা চালিয়েছে রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় রিয়াদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন বুক্তভোগী সেই বিএনপি নেতা। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দখলদারিত্ব আর ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে আর এ জন্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বেশ কয়েকবার।