না:গঞ্জে রাজাকার ইস্যুতে ফের বিতর্ক!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে কুখ্যাত রাজাকার গোলাম রাব্বানীকে ফের উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিগত সময়গুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গোলাম রাব্বানীর পুত্র খালেদ হায়দার খান কাজলের উপস্থিতি নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীসহ বিশিষ্টজনরা মন্তব্য করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ রাব্বানীর পক্ষে জেলা প্রশাসকের বরাবর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যয়নপত্র প্রদানকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির কিংমেকার হিসেবে পরিচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মোহাম্মদ আলী কোথায় কখন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সন্ত্রাস-নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। স্বাধীনতার মাসে রাজাকার ইস্যু নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠ বেশ সরব। তবে মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরও রাজাকার বংশের এখনো দাপট রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজ বিশ্লষকরা।

জানাগেছে, গত ২৪ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়াত গোলাম রব্বানীর ব্যাপারে একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। প্রত্যয়নপত্রে গোলাম রব্বানী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী কোন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন না বলে উল্লেখ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে এই প্রত্যয়নপত্র প্রদান করা হয়। এর দুইদিন পরই গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের জালকুড়িতে প্রীতি কাবাডি খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্ত্যবে ‘রাজাকারের সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা করবেন না’ বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। আইভী বলেছেন, যারা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে বিকৃতি করার চেষ্টা করছেন দয়া করে আমাদেরকে বিভ্রান্ত করবেন না। দয়া করে তরুন প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না। একটি পরিবারের তাবেদারি করতে যেয়ে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসকে কোনোভাবে বিকৃত করবেন না। দয়া করে রাজাকারের সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা বানানের চেষ্টা করবেন না। সন্ত্রাস-নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রফিউর রাব্বি মাসদাইরে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, গোলাম রব্বানী নন্দিপাড়ায় কয়েকজন হিন্দুর সম্পত্তি লুটপাট করেছে। আজিজ সর্দারকে ব্যবহার করে তারা নারায়ণগঞ্জে শান্তি বাহিনী গঠন করেছে। যে আজিজ সর্দারকে মুক্তিযোদ্ধারা ’৭২ সালে হত্যা করেছে। আজকে যারা গোলাম রাব্বানীকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় আমরা তাদের কাছে জানতে চাই আপনারা কবে কখন কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ আলিকে জিজ্ঞেস করতে চাই আপনি কবে কোথায় কখন কি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ? আমরা জানতে চাই। জেনে কৃতার্থ হতে চাই। আপনারা যারা একজন রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে স্বীকৃতি দলেন আপনারা কতটা মুক্তিযোদ্ধা সেটি জানার অধিকার আমাদের রয়েছে। আপনারা জানান আপনারা কবে কোথায় কখন কি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।

সূত্র বলছে, দীগৃদিন ধরেই কুখ্যাত রাব্বানী রাজাকারকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথির চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। যা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিল। মুক্দিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানে কাজলের উপস্থিতির কারণে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানকে ধিক্কার জানিয়েছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ রাব্বানীর পক্ষে প্রত্যায়নপত্র প্রদান করায় নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ