না:গঞ্জ বিএনপিতে ‘কিং মেকার’ আতঙ্ক

নারায়ণগঞ্জ সেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা আর কমিটি বাণিজ্যে রীতিমতো ধুঁকছে দলটির নেতাকর্মীরা। দিনের পর দিন রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোনো ফল আসছে না তাদের। বরং সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে যারা গা বাঁচিয়ে চলেছেন, তারাই বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। আর এ কারণেই রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

তৃণমূল পর্যায়ের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের বাড়ি আড়াইহাজার হলেও সমগ্র নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তিনি। আর এ কারণে নারায়ণগঞ্জে যেখানেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি হচ্ছে, সেখানেই কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন আজাদ। আজাদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কোনো সংগঠনের ইউনিট কমিটিও। ফলে সর্বত্র এখন আজাদ আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে নজরুল ইসলাম আজাদের পরিচয় কমিটি ম্যাকার হিসেবে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের সময় হলেই নজরুল ইসলাম আজাদ দোকান খুলে বসেন এবং বিভিন্ন দামে পদ-পদবী কেনাবেচা করেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এজন্য কমিটি বাণিজ্যের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি নিয়ে একাধিকবার আজাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলো বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা, করেছিল আজাদকে লাঞ্ছিত।

এদিকে নজরুল ইসলাম আজাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সরকারি দলের উপর মহলেও। যে কারণে আজাদের কথার বাইরে গেলে প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করান বিএনপি নেতাকর্মীদের- এমন গুঞ্জন রয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। আর তাই আজাদের পছন্দমত লোকজনকেই দেয়া হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আবার যারা কমিটিতে আসতে চাইছেন তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন আজাদের দরবারে। কমিটি বাণিজ্য আগে গোপনে হলেও আজাদের কল্যাণে না এখন ওপেন সিক্রেট। আজাদ খুশি থাকলে কমিটিতে পদ মিলবে, তানাহলে মিলবে না।

সূত্র মতে, গত জানুয়ারিতে ঘোষণা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আওতাধীন ১০ টি ইউনিট কমিটি। এর মাঝে আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি, আড়াইহাজার পৌর বিএনপি ও গোপালদী পৌর বিএনপি’র পুরো কমিটিই আজাদের লোকজন দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বাকি কমিটিগুলোতেও ছিলো আজাদের প্রচ্ছন্ন যোগসাজশ। যার ফলে অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী হয়েছেন পদ বঞ্চিত। আর এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি থেকে এসব দুঃসময়ের কান্ডারীরা চিরতরে হারিয়ে যাবেন। আর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবেন নজরুল ইসলাম আজাদের মতো কিং মেকাররা- এমনটাই জানিয়েছে তৃণমূল।

সদ্য ঘোষিত নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের কমিটি নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কিং মেকার নজরুল ইসলাম আজাদের অনুসারীরা। নতুন কমিটি নিয়ে আজাদ শিবিরে দেখা দিয়েছে হতাশা। দীর্ঘদিন যাবৎ আজাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ এবং অনুগত সাদেকুর রহমান সাদেককে জেলা যুবদলের আহবায়ক করানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আসছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ কিন্তু কমিটি ঘোষণার পর দেখা গেলো এসবই ছিল আজাদের নাটক। আসলে আড়াইহাজার যুবদলের আহ্বায়ক ভিপি কবির হোসেনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাকে জেলা যুবদলে পুনর্বাসিত করেছেন আজাদ। আর টাকা না থাকায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন সাদেকুর রহমান সাদেককে- এমনটাই জানা গেছে আজাদ অনুসারীদের কাছ থেকে।

তবে এবার স্বয়ং আজাদের নিজ শিবিরে দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ। নিজ বলয়ের সাদেকুর রহমান সাদেক ও রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়াকে জেলা যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত করার আশা দেখিয়ে তলে তলে আড়াইহাজারের ভিপি কবিরের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। আর তাই দীর্ঘদিন রাজপথের ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকার পরেও হাইব্রিড কবিরের কাছে হার মানতে হয়েছে সাদেকুর রহমান সাদেককে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ