নারায়ণগঞ্জ মেইল: দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। এ কারণে তাকে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক পদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পদ উভয়ই হারাতে হয়েছে। এদিকে তৈমুরের প্রচারণায় অংশ না নিতে দলীয় নির্দেশনা ছিলো নেতাকর্মীদের উপর। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে তৈমুরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। আর এই অপরাধে তাকে যে কোনো সময় বহিষ্কার করা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। সেটি অনুধাবন করতে পেরেই নিজ থেকে দলীয় পদ পদবী ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এটিএম কামাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজে এরকম একটি স্ট্যাটাস আপলোড করেছেন তিনি। সেইসাথে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে প্রচারণায় অংশ নেয়ায় সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
এদিকে কামালের এই স্ট্যাটাসে নেতাকর্মীদের মাঝে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। অনেকে তার স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে ক্ষোভ ঝাড়েন, কেউবা পাল্টা স্ট্যাটাস দেন। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার লোভে দলীয় নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দেয়ায় কামালের উপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এটিএম কামাল তার স্ট্যাটাসে লেখেন, “দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে বার বার সতর্ক করা সত্বেও নির্বাচনে অংশগ্রহন করে দলকে বিব্রত করেছি, আমি ক্ষাপ্রার্থী। এখন নৈতিক অবস্হান থেকে দলীয় পদ থেকে আমার সরে দাড়ানো ই শ্রেয় মনে করি।”
কামালের স্ট্যাটাসের কিছুক্ষণ পরই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি মাসুকুল ইসলাম রাজিব তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন কামালকে ইঙ্গিত করে। রাজিব ফেসবুকে লেখেন, “নির্বাচন নিয়ে জাতীয়তাবাদী দলের সিদ্ধান্তটি কোন ব্যক্তির জন্য নয় এটি ছিল দেশের গনতন্ত্র এবং দেশের মানুষের অধিকার ফিরে পাবার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কারন বিএনপি দলটির দর্শন ই হলো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ।সুতরাং যারা দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এই সিদ্ধান্তের বাইরে যেয়ে কাজ করেছেন তারা অবশ্যই দেশের, দলের স্বার্থ ত্যাগ করে ব্যক্তি মুনাফার জন্য করেছেন এটা স্পস্ট।আর আজকে এসে ভুল স্বীকার এগুলো হাস্যকর এবং বিরক্তিকর ও বটে।ভাই বোনের মিলিত কুট কৌশলে যে এটাই রেজাল্ট হবে এটা সবাই বুঝলেও শুধু বুঝতে পারেন নি পূর্বের আর বর্তমানের ২ নম্বর গুলো। কেউ কেউ হয়তো দূর থেকে বাস্তব অবস্থাটা অনুধাবন না করে ইভিএম এ কারচুপি বা অন্য সব বিষয় মাথায় রেখে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি সরকার তার সব অপকৌশল প্রয়োগ করবে এটাই স্বাভাবিক আর এটাকে মাথায় রেখেই আপনাকে মাঠে নামতে হবে পরিকল্পনা করে সুসংগঠিত হয়ে যেটার কোনটাই ছিলনা।এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন সরকারের উপর মহল কিছু কিছু কাউন্সিলরকে পরাজিত করার জন্য সব শক্তি নিয়োগ করার পরেও ব্যর্থ হয়েছে তাদের স্ব স্ব কাজ, শ্রম,আর পরিকল্পনার কাছে। তাই পরিকল্পনা না করে সুসংগঠিত না হয়ে মানুষের জন্য মন থেকে না ভেবে নিজের কথা শুধু ভাবলে ফলাফল সব সময় হতাশাজনক ই হবে।”
কামালের স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি লেখেন, “আপনার দলের প্রতি যথেষ্ট অবদান আছে কিন্তু সেই অবদান কে পুজি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।শুধু কিছু সুবিধার জন্য। আপনে হয়তো ভুলে গেছেন এই দল আপনাকে কত সম্মান দিয়েছিল। কিন্তু আপনে সেই সম্মান টুকু অক্ষুন্ন রাখতে পারেন নাই।দলকে পুজি করে আপনে দলের সাধারন নেতা কর্মিদের বিভ্রান্ত করেছেন।আপনে প্রতিবার দলের ক্লান্তি লগ্নে দলের সাথে বেঈমানী করে থাকেন।আপনে দলে দূর্বোলতা সুযোগ নিয়ে দলে নেতা কর্মিদের বিপদে ফেলে চলে যান খুবিই দুঃখ জনক।”
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ লেখেন, “নারায়ণগঞ্জ মহানগর এর জাতীয়তাবাদী পরিবারের মাদার সংগঠন এর সাঃসম্পাদক হয়ে আজ নির্বাচনের পরের দিন এধরণের স্ট্যাটাস কতটুকু সমীচীন??? যদি দল বা দলের উপরের মহল বার বার বাঁধা দিয়ে থাকে তাহলে কি এমন কারণ যে আপনারা ইভিএম এর এই ভোটিং সিস্টেমকে জায়েজ করার জন্য ইলেকশনে গেলেন???দলের জন্য নিঃসন্দেহে আপনি একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন,দলের নির্দেশনা এরকম গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় থেকে কিভাবে অমান্য করলেন???দলের প্রতি আনুগত্য থেকে হলেও পর্দার আড়াল থেকে এটলিস্ট যতটুকু সম্ভব করা উচিৎ ছিলো অথবা একদম নীরব থাকা উচিৎ ছিলো।।সব থেকে বড় কথা যা করার করেছেন কিন্তু আজ নির্বাচনের ঠিক পরেরদিন এরকম স্ট্যাটাস কোনভাবেই কাম্য ছিলো না।।”