নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর মাঝে বিরোধ মিমাংসা হোক, তারা মিলেমিশে নগরীর সমস্যাগুলো সম্ধাানে একসাথে কাজ করুক- এটা চায় না নারায়ণগঞ্জের একটা পক্ষ। ডান-বামের সম্মিলিত এই তৃতীয় পক্ষ ভাই-বোনের বিরোধকে জিইয়ে রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা কওে যাচ্ছে নিয়মিত। বর্তমানে যানজট নিরসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যখন এ দুজন একসাথে মিলে কাজ করার ঘোষনা দিয়েছেন তখনও সে পক্ষটি চাইছে হকারদেও পক্ষ নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে। তবে এ দুজনের যৌথ প্রয়াসেই নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমস্যাগুলো নিরসন সম্ভব তা বুঝে গেছে নগরবাসী। তাই তারা আর এবার সেই তৃতীয় পক্ষকে সুযোগ দিতে চায় না। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এবার শামীম ওসমান ও আইভীর নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের শহরের ফুটপাতের হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ২০২৪ সালে সেই হকার সমস্যা সমাধান হয়েছে শামীম-আইভীর ঐক্যের কারণে। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আয়োজনে গোল টেবিল বৈঠকের পর নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত হকার মুক্ত হয়েছে। শুধু হকার ইস্যুই নয়, নগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধনে শামীম-আইভীর ঐক্যের বিকল্প নেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনের পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। বার বার তাদের দুইজনের মধ্যে ঐক্যের সুর আসলেই তৃতীয় একটি স্বার্থবাজ পক্ষের উস্কানীতে তা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণববনে ডেকে শামীম-আইভীর বিরোধ মিটিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাও তৃতীয় পক্ষের কারণে স্থায়ী হয়নি। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গোল টেবিল বৈঠকের পর সেই তৃতীয় পক্ষ আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। যা খোদ স্বীকার করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, আইভী আর আমি এক টেবিলে বসছি তা দেখে অনেকে অখুশি।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের শব্দের সঙ্গে আইভী-শামীম ওসমানের বিরোধ শব্দটাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের দল একটা হলেও একজন ডানে গেলে অন্যজন বামে! কথার যুদ্ধে একজন অপর জনকে বেয়াদব সম্বোধন করতেও পিছপা হননি। এমনকি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ বিরোধের মীমাংসার চেষ্টা করেও সমাধান খুঁজে পাননি।
সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং শামীম ওসমানের পরিবারের ‘দ্বন্দ্ব’ বহু পুরনো। ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে তা ‘তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে’। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে জয়লাভ করেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমানকে ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। আর তাদের এই দ্বন্দ্ব ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল।
শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ বরাবরই ফায়দা লুটেছেন। এই তৃতীয় পক্ষের সদস্য হিসেবে রয়েছেন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, সাংবাদিক ও বাম রাজনৈতিক কিছু নেতা। যারা বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছেন। কর্মী না থাকলেও শীর্ষ পদ পাওয়ায়, জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা হওয়াসহ বিভিন্ন ভাবে সুবিধা নিয়েছেন তারা। তাই শামীম-আইভীর ঐক্যের সুর উঠলেই তৃতীয় পক্ষের সদস্যরা পুনোরায় বিরোধ সৃষ্টি করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এতে তারা বার বার সফলও হয়েছেন।
নগরবাসীর মতে, সুন্দর নগরী গড়তে শামীম-আইভীর ঐক্যের বিকল্প নেই। তাদের ঐক্যের কারণে শহরের ফুটপাত এখন হকার মুক্ত হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাস, মাদক মুক্ত করতে তাদের ঐক্য অব্যাহত থাকা জরুরী