নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জকে মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যু মুক্ত করতে গত ২৭ জানুয়ারি বিশাল সমাবেশ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। “প্রত্যাশা” নামে অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে ওসমানী স্টেডিয়ামে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সমাবেশ সাংবাদিক, জেলা আইনজীবী সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, শিক্ষক, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, খ্রিস্টান ধর্মীয় যাজক, জনপ্রতিনিধি, স্কুল শিক্ষার্থী, বিকেএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনসহ ওসমান পরিবারের অনুসারিরা উপস্থিত ছিলেন।সেই সমাবেশে নারায়ণগঞ্জকে ২৮ ফেব্রুয়ারির (শামীম ওসমানের জন্মদিন) মধ্যে মাদক, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যু মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছিলেন শামীম ওসমান। সমাবেশে উপস্থিত না হওয়ায় ডিসি-এসপিরও কড়া সমালোচনাও করেছিলেন তিনি।
তবে শামীম ওসমানের সেই ঘোষনা সমাবেশের মধ্যেই সিমাবদ্ধ করেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি দুবাই শহরে অবস্থান করছেন। অথচ এই দিনে নারায়ণগঞ্জকে অপরাধ মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছিলেন তিনি।
নগরবাসীর মতে, বিভিন্ন ইস্যুতে হুংকার দিয়ে বরাবরই আলোচনায় থাকেন শামীম ওসমান। তারই অংশ হিসেবে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যদিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি বিশাল করে নারায়ণগঞ্জকে অপরাধ মুক্ত করার ঘোষনা দেন । তবে ২৭ জানুয়ারীর পর এব্যাপারে তার তেমন কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শহরকে যানজট ও ফুটপাতে হকারমুক্ত করার লক্ষ্যে গোল টেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ভূমিদস্যুদের ৯০ শতাংশই শামীম ওসমানের অনুসারি। যারা বিভিন্ন সময়ে অসহায় মানুষদের জমি দখল করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অসহায় মানুষদের জমি দখল করে দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা।ফতুল্লার বিসিক ও সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে গার্মেন্টসের জুট সেক্টর, চোরাই তেল, হাট-ঘাটসহ বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রনকারীর অধিকাংশই শামীম ওসমানের অনুসারি। এসকল সেক্টর দখল করতে অবৈধ অস্ত্রের মহড়াও দিতে দেখা গেছে সন্ত্রাসীদের। এসকল সন্ত্রসীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
২০১৫ নারায়ণগঞ্জে মাদকের সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতা ও ২২ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে একটি তালিকা জমা দিয়েছিল বিশেষ এক গোয়েন্দা সংস্থা। যা সেই সময় জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক প্রতিকাগুলোতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই তালিকায় রাজনৈতিক যেসকল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে তারা প্রায় সকলেই শামীম ওসমানের অনুসারি ছিলেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, পাগলার মেরিন এন্ডারসন ও নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভিতর থেকে বিভিন্ন ভাবে শহর ও শহরতলীতে মদ ও বিয়ার ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই দুই প্রতিষ্ঠানে মদ সরবরাহকারী হিসেবে তানভীর আহাম্মেদ টিটু নামে এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। পাগলার মেরিন এন্ডারসনে মদ জব্দের ঘটনায় এই টিটুর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। কিন্তু ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল।
এদিকে, গত গত ২৭ জানুয়ারিতে দেয়া শামমি ওসমানের ঘোষনার বাস্তব রূপ চায় নারায়ণগঞ্জবাসী। যদিও ২৮ ফেব্রুয়ারি অতিবাহিত হওয়ার পরও দৃশ্যমান ফলাফল না হওয়ায় ‘প্রত্যাশার’ প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল।