নারায়ণগঞ্জ মেইল: দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অসন হলো ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ। এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের জন্যে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও এই আসনের সাবেক সাংসদ মো: গিয়াসউদ্দিন। গিয়াসউদ্দিনকে ঠেকাতে শামীম ওসমান রাজনীতির সকল কৌশলই অবলম্বন করছেন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আসনে ভোটে জিততে হলে প্রধাণ ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দিতে পারেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। কারন সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জে রয়েছে আইভীর বিশাল জনপ্রিয়তা। এখানকার ভোটব্যাংক অনেকটাই আইভীর নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া ফতুল্লায় শ্রমিক নেতা কাউসার আহমেদ পলাশের নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে একটি বিশাল অংশ আর পলাশ এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদি পলাশ মনোনয়ন না পান তবে পলাশ অনুসারীদের ভোট শামীম ওসমানের পক্ষে কতটা যাবে সে বিষয়েও প্রশ্নের অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া পলাশের সাথে সিটি মেয়র আইভীরও রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। তাছাড়া তারা দুজনই শামীম বিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক মহলে।
বিগত দিনগুলোতে সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র আইভীর মধ্যেকার বিরোধ নানাভাবে আলোচনায় এসেছে। ফুটপাতের হকার ইস্যুতেও মারামারি পর্যন্ত হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সারা বছরই দুজনের মাঝে কথার লড়াই চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে তারা একে অপরকে আক্রমন করে বক্তব্য দিচ্ছেন হরহামেশাই। শামীম-আইভী বিরোধ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো: গিয়াসউদ্দিন এবার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তবে এই আসনে গিয়াসউদ্দিন ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন এটা এক প্রকার নিশ্চিত। আর এখানেই বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের যত মাথাব্যাথা। কারণ এই আসনে একমাত্র গিয়াসউদ্দিরই রয়েছে শামীম ওসমানকে পরাজিত করার অভিজ্ঞতা। তাছাড়া আওয়ামীলীগে যেমন দাপুটে নেতা শামীম ওসমান তেমনি বিএনপিতেও গিয়াসউদ্দিন হলেন সবচেয়ে জাঁদরেল রাজনীতিবীদ। সমানে সমানে লড়াইয়ের আভাসে ভোটব্যাংক তার কতটা সমৃদ্ধ আর কে কার পক্ষে আর কে পক্ষে না তা বিবেচনার বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় শামীম ওসমানের চেয়ে গিয়াসউদ্দিনকেই এগিয়ে রাখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। কারণ বিএনপির প্রায় পুরো অংশটাই রয়েছে গিয়াসউদ্দিনের পাশে। তাছাড়া দীর্ঘদিন দল ক্ষমতার বাইরে থাকায় নিজেদেও মধ্যকার সকল বিভেদ বিভক্তি ভুলে বিএনপির নেতাকর্মীরা চাইছে দলীয় লোককেই নির্বাচিত করতে। গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বে তাই ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু শামীম ওসমানের বেলায় তার পুরো উল্টো চিত্র। শামীম ওসমানের নিজ বলয় ছাড়া বাকিদের সাথে তার বৈরি সম্পর্ক এখনো চলমান। বিশেষ করে সিটি মেয়র আইভী ও শ্রমিক নেতা পলাশের সাথে তার বিরোধ মিটমাট না হওয়ার সুযোগ পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাতে মরিয়া গিয়াসউদ্দিন। তাছাড়া আইভী গিয়াসউদ্দিনের আত্মীয়। পারিবারিক সেই সম্পর্ক মাঝে মাঝে দলীয় সম্পর্কেরও উর্ধ্বে উঠে যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে একাধিকবার। বিগত দিনগুলোতে নাসিক নির্বাচনে আইভীর পাশে ভোট প্রার্থনায় দেখা গেছে গিয়াস পুত্র সাদরিলকে। তাছাড়া আইভীর বিজয়ে তাকে মিষ্টিমুখও করিয়েছেন গিয়াস। তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামীম ওসমানের যত ভয় মেয়র আইভীকে নিয়ে ততটাই ভরসা গিয়াসউদ্দিনের জন্য এমটাই মনে করছে এখানকার ভোটাররা। ভোটারদের সেই শংকা কতটা সত্যি হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।