নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ফতুল্লা থানা বিএনপি’র কমিটি গঠন। জোর গুঞ্জন রয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপি’র নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ মহলের প্রেসক্রিপশনে ফতুল্লা থানা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন জেলা বিএনপি’র আহবায়ক এড. তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক অ্যাডভোকেট মামুন মাহমুদ। আর এ ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ফতুল্লা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে। দলের এই চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের দালালদের হাতে কমিটি তুলে দেয়া হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, আর এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে ফতুল্লা বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ব্যস্ত সময় পার করছে জেলা বিএনপির অন্তর্গত ইউনিট কমিটি গঠন করতে তবে সকল ইউনিট কমিটির মধ্যে সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন ফতুল্লা থানা বিএনপি’র কমিটি গঠন করতে গিয়ে। কারণ এখানে যোগ্যদের চেয়ে অযোগ্যদের দাপট অনেক বেশি। দীর্ঘদিন যাবৎ ফতুল্লা থানা বিএনপি’র কমিটির একক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন শিল্পপতি মোঃ শাহ আলম কিন্তু গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর তড়িঘড়ি করে আগের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। সে কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিতর্কিত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে আর সদস্য সচিব করা হয় পান্না মোল্লাকে।
বর্তমান জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির উপর দায়িত্ব পড়ে জেলার সকল থানা কমিটি পুনর্গঠনের। এরই ধারাবাহিকতায় ফতুল্লা থানা কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি। কিন্তু আসন্ন কমিটিতে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের নিয়ে ঘোর আপত্তি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃবৃন্দের। বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে দীর্ঘদিন ধরে আঁতাত করে চলা আজাদ বিশ্বাস এবং রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। আজাদ বিশ্বাস এবং রিয়াদ চৌধুরির নেতৃত্বে কমিটি দেয়া হলে পাল্টা বিদ্রোহী কবিতা দেওয়ারও আভাস দিয়েছে তৃণমূল।
তৃণমূল জানায়, বিএনপি নেতার পরিচয়ে আজাদ বিশ্বাস এবং রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী মূলত সরকারি দল আওয়ামী লীগের এজেন্ট। তারা বিএনপির আভ্যন্তরীন সকল তথ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। তাছাড়া বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা এবং তাদের বাড়িঘর লুটপাট ও সম্পত্তি দখলের নেপথ্যে রয়েছেন এই দুই নেতা।
ক্ষোভের সঙ্গে ফতুল্লা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, আজাদ বিশ্বাস প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে দাঁড়িয়ে মাইকে বলেন শামীম ওসমান আমার নেতা। আওয়ামী লীগের গত এক যুগের শাসন আমলে বিএনপি’র শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মী পর্যন্ত মামলা-হামলায় জর্জরিত অথচ আজাদ বিশ্বাসকে এবং রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে এখনো জেল খাটতে হয়নি। শিকার হতে হয়নি সরকারি দলের কোনো হামলা মামলা ও নির্যাতনের। রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে গত এক যুগ রাজনীতির মাঠে দেখাই যায়নি। হঠাৎ করে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটিতে ঢুকে যান তিনি এবং ফতুল্লা থানা বিএনপি’র কমিটি বাগিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
এদিকে তৃণমূলের ক্ষোভ জেলা বিএনপি’র আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের প্রতিও। কারণ অদৃশ্য ইশারায় বিএনপি’র জন্য ক্ষতিকর আজাদ বিশ্বাস আর রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে তারা ফতুল্লা বিএনপি’র কমিটির দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন। বিশেষ মহল থেকে অশেষ সুবিধা পেয়ে অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন করে নিজেদের ব্যর্থতার পাল্লা আরেকটু ভারী করছেন তৈমুর-মামুন, এমনটাই জানিয়েছে ফতুল্লা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।