নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সাম্প্রতিক অবস্থা খুবই নাজুক। সাইদা শিউলী নামক এক নারীর সাথে প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে তার রাজনৈতিক ও সমাজিক অবস্থান আজ হুমকির মুখে। সেই নারীর দায়েরকৃত মামলার আসামী হয়ে এখন তাকে ফেরারী জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অথচ বিষয়টি একান্তই খোরশেদের পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ছিলো কিন্তু কেউ এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে ধারনা করছেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল। তাদের মতে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খোরশেদ যাতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার যোগ্য না থাকেন, সে লক্ষ্যে একটি মহল এ ইস্যুটাকে কাজে লাগাচ্ছেন। যার প্রমাণ একজন জনপ্রিয় কউিন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের সাথে সাথেই তা মামলা হিসেবে এন্ট্রি করেছে পুলিশ। স্বাভাবিক সময়ে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ হলে তা তদন্ত করে সত্য প্রমানিত হলে মামলা হিসেবে এন্ট্রি হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন এক উপর মহলের ইশারায় তা দ্রুতই রঙ পাল্টেছে বলে মনে করেন অনেকে।
মামলা এন্ট্রি বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ মেইলকে জানান, এ বিষয়ে কোন চাপ ছিলো না। ঘটনার সত্যতা পেয়েছি তাই মামলা নিয়েছি।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ, প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নারায়ণগঞ্জে আলোড়ন তুলেছেন ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই জনগনকে সচেতন করা, মাস্ক হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তাসহ করোনায় মৃত মানুষকে দাফন ও সৎকার করে আলোচনার শীর্ষে চলে আসেন এই জনপ্রতিনিধি। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এই লড়াকু সৈনিক এখন নিজেই জীবন যুদ্ধে লড়াই করছেন নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
এদিকে করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াই শুধু মাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যে এবং মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাড়ানোর অভিপ্রায়েই করে যাচ্ছেন বলে একাধীকবার জানিয়েছেন করোনা যোদ্ধা খোরশেদ, এর পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা নির্বাচনের ইচ্ছা তার নেই। শুধুমাত্র সমাজসেবার উছিলায়ই তার এ মরনপণ লড়াই।
তবে খোরশেদ যতই বলুক এর পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, তার পক্ষে একটি মহল উঠে পরে লেগেছে পরবর্তী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত। অনেকে আইভীর বিকল্প হিসেবে খোরশেদকে মেয়র পদে প্রার্থী করে ফেলেছেন একাধকিবার। সেই সাথে খোরশেদের প্রতিটি কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিও যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে তাতে শুধুমাত্র সমাজসেবার উদ্দেশ্যে সবকিছু করার বিষয়টি ধোপে টিকছে না। কারন আল্লাহকে খুশি করতে হলে প্রচারের দিকে তাকানোর কথা না।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান মেয়র আইভীর নিস্ক্রিয়তাও খোরশেদকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী পেশায় একজন চিকিৎসক। একজন জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি একজন চিকিৎসক হওয়ায় বর্তমান করোনা মহামারিতে আইভীর কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা ছিলো আকাশচুম্বি। কিন্তু মেয়র হিসেবে জনগনের পাশে দাড়ানোর বা দুস্থ্য অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়ানোর কথা থাকলেও করোনাকালে বাসা থেকেই বের হননি তিনি। যে নারায়ণগঞ্জবাসী বারবার ভোট দিয়ে সেলিনা হায়াত আইভীকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন, চরম দু:সময়ে তারা তাদের সেই প্রিয় মেয়রকে খুঁজেই পেলেন না। লকডাউনে কর্মহীন অসহায় মানুষের মাঝে নিজের হাতে এক মুঠো চাল দিতেও দেখা যায়নি তাকে। সরকারী ত্রাণের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও সাধারণ মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকলেও নাসিক মেয়র আইভী সে কাজটিও করেননি।
একজন জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সিটি মেয়র আইভী একজন চিকিৎসক। নামের আগে সব সময় ডা: কথাটি লেখা থাকলেও নারায়ণগঞ্জবাসী তার চিকিৎসা সেবা কখনো পাননি। তাই এবার ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে নগরবাসী ভেবেছিলো চিকিৎসক আইভীর সেবা পাবেন নারায়ণগঞ্জবাসী। কিন্তু তাদের সে আশায়ও গুড়েবালি দিয়েছেন নাসিক মেয়র। সারা দেশের চিকিৎসক সমাজ যেখানে মৃত্যু ভয়কে উপক্ষো করে করোনার বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন, সেখানে ডা: সেলিনা হায়াত আইভী নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিরেন নিজ বলয়ে।
সিটি মেয়র আইভীর নিস্ক্রিয়তার সুযোগে বিকল্প মেয়র প্রার্থীর বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে, সেই সুযোগে বর্তমান সময়ের হাটথ্রব খোরশেদের নামটি প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পরে একটি পক্ষ। তবে এই প্রচারনা যে শেষ পর্যন্ত খোরশেদের উপকারের বদলে অপকারই ডেকে এনেছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন তার শুভাকাঙ্খিরা। কারন খোরশেদেরে এই উত্থানকে ঠেকানোর জন্যে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো একটি মহল। আর সে সুযোগটি তৈরী হয়ে যায় খোরশেদের ফেসবুক লাইভে এসে প্রেমের বিষয়টি জানিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। সুযোগের অপেক্ষায় উৎ পেতে থাকা সে মহলটি যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে যায় আর খোরশেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বসের জন্যে এটাকে ব্যবহার শুরু করে।