নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে ১৯ আগস্ট শনিবার রাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। হামলার ঘটনার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও মহানগর বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিলেও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সাংসদ পুত্র অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী ভিকির নাম। যা নিয়ে শহরময় চলছে আলোচনা সমালোচনা।
এদিকে হামলায় পুলিশের একজন কর্মকর্তা আহত হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই হামলার ঘটনায় ২৯জনকে গ্রেফতার করা হলেও মূলহোতারা গ্রেফতার হয়নি।
অপরদিকে, গ্রেফতারকৃত ২৯জনের মধ্যে সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী, রিক্সা চালক, ভ্যান চালন, হকার, দিনমজুরসহ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তা নেই এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯ আগস্ট শনিবার রাত ৯ টায় ১৩ নং ওয়ার্ডের তালা ফ্যাক্টরির মোড় এবং ঈদগাহ মাঠের সামনে তান্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় পথচারী, দোকানদার, পুলিশ সদস্যসহ ১২জন আহত হয়। এছাড়াও অন্তত ১৮টি দোকান ভাংচূর করে সন্ত্রাসীরা।
১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানের অনুসারী জুবায়ের আহম্মেদ অমিও গ্রুপের সদস্যদের খোঁজ করতে এসেছিল মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার নেছার ও সাব্বির গ্রুপের লোকজন। তবে অমিও গ্রুপকে না পেয়ে সড়কে মহড়া দিয়ে চলে যাওয়ার সময় তালা ফ্যাক্টরির সামনে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে তারা। মহড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে গেলে সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াতে আসা রূপগঞ্জের এক পুলিশ সদস্য তাদের ভিডিও করেন। এ সময় সেই পুলিশ সদস্য ও পাশের এক মুদি দোকানীকে কুপিয়ে যখম করে সন্ত্রাসীরা। মহড়া দেয়ার সময় রাস্তায় পথচারী যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়ে আহত করেছে নেছার ও সাব্বিরের সন্ত্রাসী গ্রুপ।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শিদের তথ্য অনুযায়ী অনুসন্ধানে জানাগেছে, অয়ন ওসমানের সম্বন্ধী ভিকি বাহিনীর সদস্য নেছার ও সাব্বিরের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। এরআগে ভিকি নির্দেশে নেছার-সাব্বির ঝুট সেক্টর নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজীসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের সরাসরি শেল্টারে রয়েছে সন্ত্রাসী নেছার। বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে, রবিবার রাতে সন্ত্রাসী নেছার ও তার বাহিনীর সদস্যরা অয়ন ওসমানের সাথে দেখা করে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছে।
সর্বশেষ ১৯ আগষ্ট ভিকির নির্দেশে আধিপত্য বিস্তার ও শক্তির জানান দিতে এই হামলা চালিয়েছে নেছার-সাব্বির গ্রুপ। নাম না প্রকাশের শর্তে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে একাধিক গোয়েন্দা পুলিশ। তবে নেছার ও সাব্বিরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হলেও ভিকিকে গ্রেফতারের বিষয় এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এদিকে এ ঘটনায় রবিবার রাতে ফতুল্লা মডেল থানার এএসআই কামাল হোসেন বাদী হয়ে সাব্বিরসহ আটজনের নাম ও অজ্ঞাত আরো ৫০জনকে আসামী করে মামলা করেন। শহর ও শহরতলী বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় চারজনসহ মোট ২৯জনকে গ্রেফতার করে। তবে এখনো নেছার-সাব্বির গ্রেফতার না হলেও গ্রেফতারকৃত ২৯জনের মধ্যে ঘটনা সম্পর্কে অবগত নয় এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে সপ্তম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীও রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শাহীন ক্যাডেট স্কুলের সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী কাজল, বেগম রোকেয়া স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাকিবুল, মাসদাইর ছোট গোরস্থানে রিপন চাচার গ্যারেজের অটোরিক্সা চালক রেজাউল ও সাগর, তক্কাট মাঠ এলাকার জালাল মিয়ার গ্যারেজের অটো চালক চঞ্চল, কালির বাজার এলাকার ফুটপাতের হকার আমির হোসেন, চাষাড়া হোটেল দোকানদার সাগর, মোঃ সুমন আনোয়ারা গার্মেন্টস শ্রমিক গার্মেন্টস শ্রমিক রবি মালিহা, ভ্যান চালক সুমন, ফতুল্লা লঞ্চঘাটের শ্রমিক স্বাধীন ও মাসুম, রূপগঞ্জের ফাস্টফুডের দোকানী সজল, করোনী টেক্স গার্মেন্ট শ্রমিক মিজানুর রহমান, মাহিম গার্মেন্টস শ্রমিক শামীম, মুরগী ব্যবসায়ী সুজনসহ নিরিহ ব্যক্তিদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রেফতারকৃতদের আদালতে চালান করলে একাধিক আসামী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে কান্না করে বলতে থাকে ‘ঘটনার কিছুই জানি না, ডিবি আমাদের হুদাই ধরে এনেছে’।
এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম জানান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২৯জনকে গ্রেফতার করে আমাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এব্যাপারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ‘ক’ জোনের ইন্সপেক্টর আল মামুন জানান, ২৯জনের মধ্যে আমার টিম ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের অন্যান্য টিম গ্রেফতার করেছে। মূলত যারা কিশোর অপরাধের সাথে জড়িত তাদেরকে মাসদাইরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। যদি কেউ জড়িত না থাকে বা অপ্রাপ্ত বয়স হয়ে থাকে তা তদন্ত করে দেখবেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এই মালার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই সাইফুল জানান, ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে চালান করা হয়েছে। আসামী অপ্রাপ্ত বয়সেরও রয়েছে। এঘটনায় জড়িত সকলকে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভিকি ও নেছার গ্রেফতারের বিষয় তিনি জানান, ভিকি নেছার কিংবা যেই হোক অপরাধী তাকে গ্রেফতার করা হবে।
এব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।