নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই নেতাকর্মীদের মাঝে। বিএনপি’র পদ পদবী ব্যবহার করলেও সরকারি দলের তাবেদারি করেই বছরের পর বছর পার করেছেন ধুরন্ধর মুকুল। সরকারি দলের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি’র অনেক ক্ষতি তিনি ইতিপূর্বে করেছেন। এবারও বিএনপিকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করার মিশনে নেমেছেন তিনি। এ লক্ষ্য একটি বিশাল ফাঁদ পেতেছেন মুকুল। আর মুকুলের সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের সকল সফল অর্জন বিসর্জন দিতে বসেছেন দুই বিএনপি নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও আবুল কাওসার আশা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র গত এক মাসের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্রে প্রকাশ, গত ১৫ বছর সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিত মুকুল হঠাৎ করে বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার পিছনে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করে তৃণমূূল। সরকারী দলের লেজুরবৃত্তি করা মুকুল এবারো কোনো মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা করছেন এবং আগামী দিনে যাতে নারায়ণগঞ্জে সরককারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে সে লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন বলেই মনে করছেন তারা। বিএনপিতে বিভেদ বিভক্তি সৃষ্টির মাধ্যমে দলকে দুর্বল করাই মুকুলের প্রধান লক্ষ্য আর এজন্যে তিনি মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির বিরোধিতা করে নতুন নাটক সাজানোর চেষ্টা করছেন যাতে করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করা না যায়- এমনটাই মনে করে বিএনপির তৃণমূল নেতা কর্মীরা।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা তরুণ প্রজন্মের দুই উদীয়মান বিএনপি নেতা। আগামীতে বিএনপিকে নেতৃত্ব দেয়ার মত সকল যোগ্যতাই তাদের রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনীতির মূলধারায় থেকে এগিয়ে গেলে একদিন তারাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির হাল ধরবেন অথচ তাদেরকে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিতর্কিত বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তৃণমূল মনে করে মুকুল তার মিশন সফল করতে জনপ্রিয় এই দুই কাউন্সিলের কাঁধে ভর করেছেন আর মুকুলের ষড়যন্ত্রের বুঝতে না পেরে নিজেদের সকল অর্জন বিসর্জন দিচ্ছেন খোরশেদ ও আশা। সেই সাথে তাদের নিজেদের একটি সুন্দর আগামীর স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করছেন যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারছেন না।
সূত্র মতে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে অধাহবায়ক ও এডডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। বিএনপির ভভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমাানের নির্দেশনায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি ঘোষনার পর থেকেই বিরোধীতা শুরু করেন যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল। কমিটির বেশ কয়েয়কজন সদস্যকে ভুল বুঝিয়ে মূলধারার বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন এবং বিএনপির বহিস্কৃত নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসভবনে গিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কেন্দ্রে সেই পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
গত ৬ অক্টোবর সারাদেশের প্রতিটি মহানগরে শোক র্যালির কর্মসূূচি ঘোষনা করে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্র্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয় সবগঠিত মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করেন তারা। এসব দেখে পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দেন আতাউর রহমান মুকুল এবং ঐদিনই বিশাল লোকবল নিয়ে শহরে শোডাউন করেন। মুকুলের এই লোকবল দেখে ক্ষোভে ফেটে পরেন মহানগর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিগত সময়ে যখন পুলিশের হামলা মামলা নির্যাতন উপেক্ষা করে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে তখনকার সময়ে একবারের জন্যেও দেখা মিলেনি এই মুকুলের। লোকজন নিয়ে আসাতো দুরের কথা তিনি নিজেও কখনো আসেননি বিএনপির মিটিং মিছিলে। পুলিশের হামলা মামলারও শিকার হতে হয়নি তাকে। বরং সরকারী দলের এমপিদের সাথে প্রায়ই সভা সমাবেশ করতে দেখা গেছে তাকে। হঠাৎ করে এতো লোক কই পেলো মুকুল এই প্রশ্ন এখন তৃণমূলের মনে। অনেকে মনে করেন সরকারী দলের লোকদের টাকা দিয়ে ভাড়া করে এনেছেন মুকুল শোডাউন করার জন্যে। মুকুলের এ কর্মকান্ডকেও ঘড়যন্ত্রের অংশ মনে করছেন তারা। তাদের মতে সরকারী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুকুল মিশনে নেমেছেন যাতে করে আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব না হয়।