নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল লোকজন নিয়ে বিশাল শোডাউন করায় তৃণমূলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ বছর সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিত মুকুল হঠাৎ করে বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার পিছনে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করে তৃণমূূল। সরকারী দলের লেজুরবৃত্তি করা মুকুল এবারো কোনো মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির পায়তারা করছেন এবং আগামী দিনে যাতে নারায়ণগঞ্জে সরককারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে সে লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন বলেই মনে করছেন তারা। ক্ষুব্দ তৃণমূলের প্রশ্ন মুকুলের এই লোকবল এতোদিন কোথায় ছিলো!
সূত্র মতে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে অধাহবায়ক ও এডডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি। বিএনপির ভভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমাানের নির্দেশনায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এই কমিটির অনুমোদন দেন। কমিটি ঘোষনার পর থেকেই বিরোধীতা শুরু করেন যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুল। কমিটির বেশ কয়েয়কজন সদস্যকে ভুল বুঝিয়ে মূলধারার বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন এবং বিএনপির বহিস্কৃত নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের বাসভবনে গিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষনা দেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কেন্দ্রে সেই পদত্যাগপত্র জমা দেননি।
গত ৬ অক্টোবর সারাদেশের প্রতিটি মহানগরে শোক র্যালির কর্মসূূচি ঘোষনা করে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্র্মসূচি পালনে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয় সবগঠিত মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় মতবিনিময় সভা করেন তারা। এসব দেখে পাল্টা কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দেন আতাউর রহমান মুকুল এবং ঐদিনই বিশাল লোকবল নিয়ে শহরে শোডাউন করেন। মুকুলের এই লোকবল দেখে ক্ষোভে ফেটে পরেন মহানগর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিগত সময়ে যখন পুলিশের হামলা মামলা নির্যাতন উপেক্ষা করে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে তখনকার সময়ে একবারের জন্যেও দেখা মিলেনি এই মুকুলের। লোকজন নিয়ে আসাতো দুরের কথা তিনি নিজেও কখনো আসেননি বিএনপির মিটিং মিছিলে। পুলিশের হামলা মামলারও শিকার হতে হয়নি তাকে। বরং সরকারী দলের এমপিদের সাথে প্রায়ই সভা সমাবেশ করতে দেখা গেছে তাকে। হঠাৎ করে এতো লোক কই পেলো মুকুল এই প্রশ্ন এখন তৃণমূলের মনে। অনেকে মনে করেন সরকারী দলের লোকদের টাকা দিয়ে ভাড়া করে এনেছেন মুকুল শোডাউন করার জন্যে। মুকুলের এ কর্মকান্ডকেও ঘড়যন্ত্রের অংশ মনে করছেন তারা। তাদেও মতে সরকারী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুকুল মিশনে নেমেছেন যাতে করে আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব না হয়।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থেকেও তিনি প্রায় এক যুগ যাবত সরকারী দলের নেতাদের তাবেদারি করেছেন, এমনকি তার থেকে নানাভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিগুলোতে অংশ না নিলেও সরকারী দলের অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে শোডাউন করতেন। সেই ‘লাঙ্গল মার্কা’ মুকুল নিশ্চয়ই নতুন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে বলে আশংকা তৃণমূলের। এতোদিনের আন্দোলন সংগ্রামে যে মুকুলকে খুঁজেই পাওয়া যেতো না, তিনি এখন বিএনপির সবগুলো কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। এমনকি সদ্য ঘোষিত মহানগর বিএনপির কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক রাখা হয়েছে মুকুলকে।
তৃণমূলের মতে, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই স্থানীয় রাজনীতিতে। কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ গালি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যে অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সে গালি হজমের পাশাপাশি মুচকি হাসিও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা গোপীনাথ দাস। সে অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি হিসেবে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি হাসিমুখে সে গালি হজম করেন কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও গত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে।
এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন মুকুল। বন্দরের কেন্দ্রগুলো থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন মুকুল- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আর তৈমূরকে সহযোগিতা করায় এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় অথচ এটিএম কামালের মতো মুকুলও সরাসরি তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে মুকুল বলেছিলেন ‘তৈমূূরের পক্ষে কাজ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দেয়া হবে’।