নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এই কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে বিএনপির সাইনবোর্ডে সরকারী দলের সাথে আতাঁত করা নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে যাকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ‘দালাল মুকুল’ নামে অভিহিত করে থাকেন। দলের এই দু:সময়ে ঘোষিত কমিটিতে সুবিধাবাদী মুকুলকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির তৃণমুল। বিএনপিকে দালাল মুক্ত করতে না পারলে আন্দোলন সংগ্রাম ফলপ্রসু হবেনা বলেও অভিমত তাদের। ক্ষুব্দ নেতাকর্মীদের মতে, নৌকা হাতে মুকুলের সেই হাস্যোজ্জল ছবি এখনো হৃদয়ে রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করে। আর এ্ই নৌকার প্রতি ভালোবাসার পুরস্কার দেওয়া হলো মুকুলকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বানিয়ে।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থেকেও তিনি প্রায় এক যুগ যাবত সরকারী দলের নেতাদের তাবেদারি করেছেন, এমনকি তার থেকে নানাভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিগুলোতে অংশ না নিলেও সরকারী দলের অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে শোডাউন করতেন। সেই ‘লাঙ্গল মার্কা’ মুকুল নিশ্চয়ই নতুন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে বলে আশংকা তৃণমূলের। এতোদিনের আন্দোলন সংগ্রামে যে মুকুলকে খুঁজেই পাওয়া যেতো না, তিনি এখন বিএনপির সবগুলো কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন। এমনকি সদ্য ঘোষিত মহানগর বিএনপির কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক রাখা হয়েছে মুকুলকে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই স্থানীয় রাজনীতিতে। কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ গালি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যে অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সে গালি হজমের পাশাপাশি মুচকি হাসিও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা গোপীনাথ দাস। সে অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি হিসেবে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি হাসিমুখে সে গালি হজম করেন কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও গত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে।
এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন মুকুল। বন্দরের কেন্দ্রগুলো থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন মুকুল- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আর তৈমূরকে সহযোগিতা করায় এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় অথচ এটিএম কামালের মতো মুকুলও সরাসরি তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ িিবএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে মুকুল বলেছিলেন ‘তৈমূূরের পক্ষে কাজ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দেয়া হবে’।