নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, “বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করেছিলো বীর বাঙ্গালী জাতি। আবারো বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েই এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজপথে যত রক্তই ঝড়ুক না কেনো বিএনপির নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরে যাবেনা। তারা মাথায় কাফন বেঁধে ভাইয়ের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে আজ ঐক্যবদ্ধ।”
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালীতে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে মারাত্মক আহত এডভোকেট সাখাওয়াত গণমাধ্যমকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথাগুলো বলেন। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর ২নং রেল গেইট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে শাওন নামে এক ছাত্রদল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
এডভোকেট সাখাওয়াত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এদেশের প্রশাসন এক চোখা নীতিতে চলে। আওয়ামীলীগের নেতারা রাস্তা বন্ধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা সভা সমাবেশ করে তখন তারা কোনো একশন নেয়না অথচ আমরা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিলাম কিন্তু পুলিশ তাকে বাঁধা দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। আমাদের এক কর্মী নিহত হয়েছে আহত হয়েছে অগনিত। নিরিহ বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর এভাবে নির্বিচারে গুলি চালাতে পুলিশের হাত একবারও কাঁপলো না। তারা একবারো ভাবলোনা কি করে একটি মায়ের বুক তারা খালি করলো। আমি এ জঘন্যতম ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং শাওন হত্যার ঋণ এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতেই শোধ করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিনত হয় শহরের ২নং রেল গেইটসহ আশেপাশের এলাকা। এ সময় শাওন নামে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশ সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধীক।
এদিন দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীরা সকাল সাড়ে দশটায় শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে শোভাযাত্রা বের করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়তে থাক। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এ সময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট বুকে বিদ্ধ হয়ে শাওন নামে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন বিপুল বলেন, আকাশ মাহমুদ শাওন নামের ২০ বছর বয়সী ওই যুবকের বুকে ‘গুলির চিহ্ন’ রয়েছে৷হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়া আরও ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহত শাওন ফতুল্লার পঞ্চবটি নবীনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে৷ তিনি যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা।
এদিকে সংঘর্ষের সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাশেই মর্গ্যান স্কুলে তখন পরীক্ষা চলছিল। সে সময় টিয়ারশেলের গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে পাঁচ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান চিকিৎসক নাজমুল।
জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, “তারা কোনো ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিলেন। তাতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।”
এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছোড়ে।”
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।