এবার জেলা পরিষদ নিয়ে দুই মেরুর লড়াই!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ যে দুটি ভাগে বিভক্ত তা প্রতিনিয়তই মনে করিয়ে দেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের সকল কর্মকান্ডেই ফুটে উঠে এই বিভক্তি। সিটি মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর নিয়ন্ত্রনে দক্ষিণ মেরু আর সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের দখলে আওয়ামীলীগের উত্তর মেরু। এই মেরুকরণের রাজনীতি চলে আসছে বছরের পর বছর যুুগের পর যুগ ধরে। তারই ধারাবাহিতায় এবার নারায়ণগঞ্জের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ নিয়েও চলছে দুই মেরুর রশি টানাটানি।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বর্তমান অবস্থান দক্ষিণ মেরুতে। তিনি ২০১৬ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পূর্বে উত্তর মেরুতে অবস্থান করছিলেন। তৎকালীন সময়ে আনোয়ার হোসেনকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়নের জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন নারায়য়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। কিন্তু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্র্ডের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে। এ শোক সইতে না পেরে হার্ট এ্যাটাক করে হাসপপাতালে শয্যাশায়ী হন আনোয়ার হোসেন। তখন আনোয়ার হোসেনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিনা বাঁধায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্র্বাচিত হন আনোয়ার হোসেন। নির্বাচিত হওয়ার পরে াবশ্য তিনি আর উত্তর মেরুতে অবস্থান করেননি, চলে এসেছেন দক্ষিণে এবং এখনও পর্র্যন্ত সেখানেই আছেন।

সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের বর্তমান বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়য়ার হোসেন এবারো চাইছেন মনোনয়য়ন। এছাড়াও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইও এবার এই পদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি। আবদুল হাইও রয়েছেন দক্ষিণ মেরুতে। এছাড়াও আইভী বলয়ের আরেক নেতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুুও এ পদের সম্ভাব্য দবিদার হিসেবে জানা গেছে। মনোনয়ন চাইতে পারেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আারাফাতও।

এদিকে সাংসদ শামীম ওসমানের নেতৃত্বধীন উত্তর মেরুতেও এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন হেভিওয়েট বেশ কয়েকজন নেতা। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা গত নির্বাচনেও মনোনয়য়ন চেয়েছিলেন। এবারো তিনি এ পদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি। এছাড়াও জেলা আাওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো: বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলালও এবার মনোনয়য়ন চাইছেন। এখন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা যাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন তিনিই হবেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের আগামীর চেয়ারম্যান। কারণ বিএনপি সারাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। সেই ধারাবাহিকতায় বলা যায় জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তারা প্রার্থী দেবে না। তাছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, সেখানে সরকারি দল ছাড়া অন্য কারো নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকায় এখানে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রায় সকলেই অনীহা লক্ষ্য করা যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া ১৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টিতে মেম্বার পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রার্থীরা। এদিন ভোটের ফলাফলে সোনারগাঁওয়ে সংরক্ষিত আসনে অ্যাডভোকেট নূর জাহান নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া ৪নং ওয়ার্ডে (সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন, ফতুল্লা ইউনিয়ন ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন) মোস্তফা হোসেন চৌধুরী, ৬নং ওয়ার্ডে (মদনপুর ইউনিয়ন, মুছাপুর ইউনিয়ন, ধামগড় ইউনিয়ন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন ও বন্দর ইউনিয়ন) নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের, সোনারগাঁও উপজেলার ৭নং ওয়ার্ডে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সোনারগাঁ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, ৯নং ওয়ার্ডে সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাত খুনের মামলার আসামি নুর হোসেনের শ্যালক নূরে আলম খাঁন জয়ী হয়েছেন।

৮নং ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু নাইম ইকবাল তালা প্রতীকে ২০ ভোট পেয়েছেন, তার প্রতিদ্বন্ধী ফারুক হোসেন ভূইয়া সিলিং ফ্যান প্রতীকে ২০ ভোট পেয়ে সমতায় রয়েছেন।

রূপগঞ্জ উপজেলায় ১৩নং ওয়ার্ডে (তারাব পৌরসভা, কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া ইউনিয়ন) মোস্তাফিজুর রহমান, ১৪নং ওয়ার্ডে (কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ও দাউদপুর ইউনিয়ন) মিজানুর রহমান, ১৫নং ওয়ার্ডে (ভুলতা ইউনিয়ন, ভোলাব ইউনিয়ন ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন) কামরুল হাসান ভূইয়া ও রূপগঞ্জে সংরক্ষিত ৫নং ওয়ার্ডে সীমা রানী পাল টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জয়ী হয়েছেন।

ভোটার জটিলতার কারণে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে মাহমুদা মালা, ২নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাফায়েত আলম সানির স্ত্রী সাদিয়া আফরীন, ৫নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর হোসেন, আড়াইহাজারের ১০নং ওয়ার্ডে খোরশেদ আলম, ১১নং ওয়ার্ডে মাহবুবুর রহমান রোমান, ১২নং ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, সংরক্ষিত ৪নং ওয়ার্ডে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভীন আক্তার কবিতা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ