নারায়ণগঞ্জ মেইল: ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। স্পেনের মাদ্রিদে ক্ষুদে ফুটবলার হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ছেলেটি। অভাব অনটনে পড়ে মাঠের ফুটবলার সেই জাহিদ হাসান নিপু হোসিয়ারি কাজে যোগ দিয়েছেন বলে সংবাদ পেয়েই তাকে আবারো মাঠে ফিরিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান পত্নী ও জেলা মহিলা সংস্থার সভানেত্রী সালমা ওসমান লিপি। এর আগে পেশাদার ফুটবল লিগ এর স্ট্রাইকার আরিফ হাওলাদার যোগালীর কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে মাঠে খেলার সুযোগ করে দেন লিপি ওসমান।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) নিজে প্রতিনিধি পাঠিয়ে নিপুর পারিবারিক সমস্যা সমাধান করে তাকে মাঠে ফেরান লিপি। এসময় নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমির কোচ খলিলুর রহমান দোলনের উপস্থিতিতে নিপুর পরিবারকে নগদ ৩০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয় এবং তার ভবিষ্যৎ খেলাধুলা ও লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন লিপি ওসমান।
এ সময় লিপি ওসমান মুঠোফোনে নিপু, নিপুর বাবা এবং কোচ খলিলুর রহমান দোলনের সঙ্গে কথা বলেন।
লিপি ওসমান নিপুর বাবাকে বলেন, আপনার বাড়ি ভাড়ার জন্য টাকা দিয়েছি সেই টাকাটা রাখেন। আর ছেলেটা যেহেতু ভালো ফুটবল খেলে ওকে খেলতে পাঠান। ওকে স্কুলে পাঠান। আর ও যেহেতু ফুটবল ভালো পারে ফুটবল খেলায় ওর ভবিষ্যৎ আছে তাই ওকে ফুটবল খেলতে দেন।
নিপুকে তিনি বলেন, তোমার পড়ালেখা চালিয়ে যাও আর ফুটবল প্র্যাক্টিস চালিয়ে যাও। আমি শুনেছি যে তোমার ঘর ভাড়ার জন্য তুমি কাজ করো। আপাতত ৭ মাসের ভাড়া আমি দিয়ে দিয়েছি। তাই ভালো করে মন দিয়ে তুমি পড়াখেলা করো আর খেলা চালিয়ে যাও। এই দুইটিতেই তোমার ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে। আমি তোমার জন্য দোয়া করি।
জাহিদ হাসান নিপু ফুটবল নিয়ে মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা দৌঁড়ালেও ক্লান্তি তাঁকে ছুঁতে পারে না। স্বপ্ন ছিল একদিন বড় ফুটবলার হবে। ফুটবলে নিপুর পায়ের জাদু দেখে মুগ্ধ হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবলের ফাইনাল উপলক্ষ্যে গ্যাজপ্রেমের পৃষ্ঠপোষকতায় স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ক্ষুদে ফুটবলারদের উৎসবের যোগ দেওয়ার জন্য নিপুকে বেছে নিয়েছিল এক বিদেশী কোচ। কিন্তু প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস ওলটপালট করে দিয়েছে নিপুর স্বপ্ন। স্পেনের মাদ্রিদে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া এই ক্ষুদে ফুটবলার সংসারের অভাবে পড়ে হোসিয়ারিতে হেলপারের কাজ নেয়। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের জেরে এ সংবাদ পৌছে যায় লিপি ওসমানের কানে।
জাহিদ হাসান নিপু ইসদাইর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন ও গার্মেন্ট ঝুট বাছাইয়ের শ্রমিক আসমা বেগমের ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে নিপু তৃতীয়। সে নারায়ণগঞ্জ ফুটবল একাডেমি থেকে ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছিল। কিন্তু করোনার কারণে আর্থিক অনটনে পড়েছে তাঁর পরিবার। বাধ্য হয়ে মাঠ ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছে নিপু। মহল্লার একটি হোসিয়ারিতে ৫ হাজার টাকা বেতনে হেলপারির কাজ করছে সে।
এর আগে গত বছরের ২৮ মে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবলের ফাইনাল উপলক্ষ্যে গ্যাজপ্রেমের পৃষ্ঠপোষকতায় মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত চার দিনব্যাপী ক্ষুদে ফুটবলারদের উৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিল সে। ফিফার সদস্যভুক্ত ২১০টি দেশের অনুর্ধ্ব-১২ ফুটবলারা সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ থেকে তিনজন সুযোগ পেয়েছিল। যাদের একজন ছিল নিপু। যদিও শেষ সময়ে ভিসা জটিলতার কারণে বাংলাদেশ থেকে কোনো ক্ষুদে ফুটবলার সেই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।