নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা ও হুমকি প্রদানের প্রতিবাদে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এই কর্মসূচি আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা।
তাদের এই দাবীর প্রতি সহমর্তিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল (ভিপি বাদল), মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা, ৭১’এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সামিউল্লাহ মিলন, জেলা আইনজীবি সমিতিরি সভাপতি এড.মহসিন মিয়াসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু, বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, ইয়ার্ণ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন কুমার সাহা, হোসিয়ারী এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সরোজ সাহা, মাসদাইর শ্মশান কমিটির সভাপতি নিরঞ্জন কুমার সাহা।
অনশনে উপস্থিত ছিলেন- জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক নিমাই দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, জিউস পুকুরের মামলার বাদী গোবিন্দ ঘোষ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ভজন চন্দ্র দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ মন্ডল শুভ, মহানগরের সভাপতি এড. অঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক রিপন কর্মকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠুন দত্ত বিল্লুসহ জেলা উপজেলা পর্যায়ের হিন্দু নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ভিপি বাদল বলেন, আওয়ামীলীগের লেবাস লাগিয়ে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করে মেয়র আইভী দলকে কলঙ্কিত করেছেন। তিনি ভুলে গেছেন আওয়ামীলীগ জনতার আর জনতার শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেয়র আইভীকে অবশ্যই জনতার বিচারের কাঠগোড়ায় দাড়াঁতে হবে।
খোকন সাহা বলেন, বড় কষ্ট হয় যখন দেখি আমাদের সরকারের আমলে আমাদেরই দলের মেয়র ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হিন্দু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় যখন দেখি জনবিচ্ছিন্ন বামপন্থীরা এই সরকার আর জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটুক্তি করার দু:সাহস দেখায় আর এই মেয়র তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসেন।
খোকন সাহা বলেন, আমি আজ এই মঞ্চে ওয়াদা করছি শুধু মন্দিরের সম্পত্তিই নয়, সে মসজিদ হোক, গীর্জা হোক কিংবা প্যাগোডা হোক, যেকোন ধর্মীয় উপসনালয়ের সম্পত্তি দখলের বিরুদ্ধে আমি পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে পাশে দাড়াঁবো।
চন্দন শীল বলেন, যারা দলের আর অসাম্প্রদায়িকতার লেবাস লাগিয়ে মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে, মসজিদ-মাদ্রাসার সম্পত্তি দখল করে তারা এই নারায়ণগঞ্জে বসবাসেরই যোগ্য না। তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে এবং অচিরেই আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সামিউল্লাহ মিলন বলেন, একটি ক্ষুধা মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সৃষ্টি করতেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তিনি বলেন, প্রায় ৬ বছর আগে অনুমতি না নেয়ার অজুহাতে জাতির বীর সন্তানদের অনুষ্ঠান করতে দেয়নি মেয়র আইভী। এই শহীদ মিনার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বের করে দেয়া হয়েছিল।
তার বিরুদ্ধেই আজ মন্দিরের সম্পত্তি আত্মসাত করার অভিযোগ। আমরা এই দখল চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সনাতনী ধর্মালম্বীর পাশে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে বলে তিনি জানান।
এড. মহসিন মিয়া বলেন, এখন থেকে কোন মসজিদ, মাদ্রাসা, গীর্জা, প্যাগোডা, মন্দিরসহ যেকোন ধর্মীয় উপসনায়ের সম্পত্তি হরণের অপচেষ্টার ঘটনায় আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা আইনজীবি সমিতির উদ্যোগে বিনাপয়সায় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনী সহায়তা প্রদান করবো বলে আমরা জেলা আইনজীবি সমিতিতে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কুমুার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার বলেন, যে সকল নকল দলিল করে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে সেইসব দলিলে মেয়র আইভীর মা, ২ ভাই, মামা, খালাসহ তারই আত্মীয় স্বজনের নাম রয়েছে।
তারা বলেন, ভোটের সময় মেয়র আইভী হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছের মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে ‘করজোরে নমস্কার’ করেন, অথচ তার পরিবারই এই মন্দিরের তথা দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে আসছে। মেয়র আইভী ও তার পরিবারের লেবাসী ভুমিকা আমাদের কাছে অনেক আগেই উন্মোচিত হয়ে গেছে