মন্তুর লোভের আগুনে পুড়ছে যুবদল!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক মমতাজউদ্দিন মন্তুর অপরাজনীতি আর মাত্রাতিরিক্ত টাকার লোভের কারনে নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ তৈরী হচ্ছে এবং তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পরছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত মমতাজউদ্দিন মন্তু কমিটিতে পদ পদবীর কথা বলে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ওসিলায় টাকা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিং সৃষ্টি করে রেখেছেন। এই গ্রুপিং আর কমিটিতে পদ পদবীর প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই নেতাকর্মীরা একে অন্যের সাথে বিবাদে লিপ্ত হচ্ছেন, হচ্ছে মারামারি। যার ভুক্তভোগী হচ্ছেন মন্তুর পিছনে গত দুই বছর সময় টাকা ও শ্রম বিলিয়ে দেয়া সেই নিরিহ কর্মীগুলা যারা এতোকিছুর বিনিময়েও একটি রাজনৈতিক পরিচয় আজো পেলোনা।

 

নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর মমতাজউদ্দিন মন্তুকে আহবায়ক আর মনিরুল ইসলাম সজলকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভ আহবায়ক কমিটি। সেই কমিটি ঘোষনার পর থেকেই শুরু মমতাজউদ্দিন মন্তুর রাজকীয় জীবন যাপন। মন্তু যেখানে যায় চার-পাঁচজন নেতাকর্মী তার সাথে সব সময় থাকে তার সেবা দেওয়ার জন্য। মন্তু ঢাকায় যাবে বড় নেতার সাথে দেখা করতে, মন্তুর জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া করতে হয়। রাতে আসার সময় ঢাকায় দামি রেস্তোরায় খাওয়াতে হয় এবং কিছু হাতখরচও দিয়ে দিতে হয়। আর এসব কিছুই হয় কর্মীদের টাকায়। তাছাড়া ঢাকার দলের রাজনৈতিক প্রোগ্রামগুলিতে কর্মীদের যোগার করে ঢাকা নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, খাওয়া দাওয়া করানো সব খরচ সেই পদ প্রত্যাশী নেতারাই বহন করেন যাদের সামনে কমিটির মুলা ঝুলিয়ে রেখেছেন আহবায়ক মমতাজউদ্দিন মন্তু। এমনকি কোরবানির ঈদে গরু কেনার জন্যেও মন্তুকে টাকা দেন তারা। নেতাকর্মীদের রীতিমতো অসহায় বানিয়ে রেখেছেন মন্তু।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা বলেন, যুবদল আহবায়ক মমতাজউদ্দিন মন্তু তার নিজ থানা সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি করে রেখেছেন। এক দিকে রেখেছেন যুবদল নেতা সহিদুল ইসলাম ও তার ভাগিনা আরমান হোসেনকে আর অপর গ্রুপে রয়েছেন যুবদল নেতা শেখ মো: অপু ও দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সফিকুর রহমান। মন্তু দুই পক্ষ থেকেই সুবিধা নেন এবং তাদের সবাইকেই কমিটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর এর বিনিময়ে বিভিন্ন উছিলায় টাকাসহ নানা সুবিধা গ্রহন করেন। সকল কিছু বুঝেও নেতাকর্মীরা মুখ বুজে থাকে কারন যুবদলের আশায় গত প্রায় দুই বছর যাবত তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় হয়নি। অনেকে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মূল দলসহ অন্য অঙ্গ সংগঠনে চলে গেছে। যারা যুবদলে পদ পদবীর পাওয়ার আশায় আছেন তারা মন্তুর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। কারন মন্তু খুবই বদ মেজাজী লোক। তার মুখের ভাষা খুবই খারাপ। সে নেতাকর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এক কথায় বললে মন্তু নেতাকর্মীদের তার কর্মচারি মনে করে আর নেতাকর্মীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে।

 

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মন্তু যুবদলের ভিতরে একজনকে আরেকজনের পিছনে লাগিয়ে রাখেন এবং বিভিন্ন উস্কানী দেন। মন্তুর পাল্লায় পরে নেতাকর্মীরা একে অপরের সাথে ঝগড়া বিবাদ করছে এমনকি মারামরির ঘটনাও ঘটছে। কিছুদিন আগে শহরের চাষাঢ়ায় যুবদলের লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে সিদ্ধিরগঞ্জের শেখ মো: অপু ও সহিদুলের মাঝে দাড়ানো নিয়ে বাক বিতন্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে অপু লোকজন নিয়ে সহিদুলের উপর হামলা চালায় এবং বিভিন্ন লাঠিসোটা নিয়ে সহিদুলকে মারধর করে। এতে সহিদুলের হাত ভেঙ্গে যায় এবং সারা শরিরে গুরুতর আহত হয়। এঘটঁনায় ক্ষুব্দ হয়ে সহিদুলের সাথে থাকা লোকজন অপু ও তার ভাই হৃদয়কে বাশের লাঠি দিয়ে রাস্তায় ফেলে পেটায়। আর এসব কিছুর জন্য দায়ি মমতাজউদ্দিন মন্তু। মন্তু চোরেকে বলে চুরি করতে গৃহস্তকে বলেন পাহারা দিতে। সে একটা কঠিন ধান্ধাবাজ টাইপের লোক। রাজনীতিতে তার মতো বাজে লোক আর একটাও নেই।

 

এদিকে, পদ দেওয়ার কথা বলে নেওয়া ত্রিশ হাজার টাকা মন্তুর কাছে ফেরত চেয়েছেন তানভীর নামে যুবদলের এক কর্মী। মহানগর যুবদলে সদস্য পদ দেওয়ার কথা বলে মন্তুকে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। তানভীরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মন্তুকে দিয়েছিলেন এক সময় যুবদলের পদ পদবীর আশায় থাকা বর্তমান ২২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাসেল বেপারি। এখন তানভীর রাসেল বেপারির কাছে টাকা চায় আর রাসেল বেপারি বলছে টাকা সে দিয়ে দিয়েছে মমতাজউদ্দিন মন্তুকে। এ নিয়ে বাক বিতন্ডাও হয়েছে এবং পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। এরকম শত শত নেতাকর্মীর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার গল্প জমা রয়েছে মন্তুর কাছে। এবং তারা সব হিসেব করে রাখছেন। মহানগর যুবদলের নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরে মন্তুর কাছ থেকে এতোদিনের সব পাওনা সুদে আসলে উসুল করবেন বলে হুঁিশয়ারি তাদের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ