নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ অধিশাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে আদেশ জারি করলে ২৯ ডিসেম্বর যোগদান করেন জায়েদুল আলম। নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পরই প্রথমে পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধ ও বিকর্তিক পুলিশ সদস্যদের নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলী করানোর কারণে জায়েদুল আলমের প্রতি নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা বেড়ে যায়। কেননা পুলিশ জনগণের বন্ধু তা প্রমাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জ। এখানে পুলিশ সুপার পদে জায়েদুল আলম যোগদানের কয়েক মাস পরই সারাদেশসহ নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিলো। করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা পুলিশের সদস্যরা সেবা নিশ্চিতসহ অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিলো। এমনকি লকডাউনের সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজার ব্যবস্থাও প্রথম পুলিশ সদস্যরাই করেছিল।
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম স্পর্শকাতর হকার ইস্যুতে পুলিশ সুপারের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায়ও চাষাড়া শহীদ মিনারের পাশে থাকা অবৈধ হকার উচ্ছেদে অভিযান চালায় পুলিশ। যদিও নারায়ণগঞ্জে হকার ইস্যু নিয়ে সদস্যা দীর্ঘদিন ধরেই। হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারী সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর অনুসারিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু পুলিশ সুপার হিসেবে জায়েদুল আলম যোগদানের পর হকার উচ্ছেদে দফায় দফায় অভিযান পরিচালিত হয়, যা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের কারনে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল এই শহর। বর্তমানে এই শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা পুলিশের ভয়ে আত্মগোঁপনে রয়েছে। আর যারা প্রকাশ্যে রয়েছেন তারাও এখন নিশ্চুপ। এছাড়াও পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের সমন্বয় বাড়াতে বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। বিট পুলিশিং র্কাক্রমের মাধ্যমে পুলিশী সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম যোগদানের পর থেকেই নারাযণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় পুলিশের কতিপয় সদস্যের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত একটি শীর্ষ দৈনিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ‘ডিবির নিয়ন্ত্রনে নারায়ণগঞ্জে ঝুট সেক্টর’ শীর্ষক একই সংবাদটিতে ডিবি পুলিশের বিভিন্ন বেআইনী কর্মকান্ডের তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সংবাদটি প্রকাশের পর অনুসন্ধান চালিয়ে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার ফলে পুলিশ সুপারের ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। এছাড়াও নতুন করে ডিবি পুলিশের আতংক ছড়িয়ে পড়ছে নারায়ণগঞ্জ শহরে। ইতিমধ্যে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি তথ্য এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, সাবেক পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনের পর জায়েদুল আলমই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সফল হয়েছেন। তাই ডিবি পুলিশের বিষয়টিও নজর দেয়া জরুরী। কেননা নারায়ণগঞ্জে সরকারি কোন কর্মকর্তা বেআইনী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তা কখনো গোঁপন থাকে না।
এব্যাপারে জেলা পুলিশ জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সকল রকম চেষ্টা চালিয়েছি। তবে কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি তা জনগণ বলতে পারবে। নারায়ণগঞ্জে চার হাজার জনে একজন করে পুলিশ রয়েছে। এই অল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না। তবে আমি চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে। ডিবি পুলিশের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।