নারায়ণগঞ্জ মেইল: সোনারগাঁ থানা বিএনপি মানেই একটা সময় ছিলো সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যপক রেজাউল করিমের একক নিয়ন্ত্রন, তিনিই ছিলেন নেতাকর্মীদের অভিভাবক। পরবর্তীতে যারাই স্থানীয় রাজনীতিতে সামনের সারিতে আসতে চেষ্টা করেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই রেজাউল করিমের কর্মী। ফলে সোনারগাঁ বিএনপিতে রেজাউল করিম মানেই একটা ভিন্ন কিছু। তবে তিনি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারনে গত কয়েকবছর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারেননি। আর এ সুযোগে অনেক হাইব্রিড নেতা টাকার জোরে নিজেকে সোনারগাঁ বিএনপির অভিভাবক ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে এ সকল ভূইফোর নেতাদের জন্যে আবারো চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছেন বর্ষিয়ান এই নেতা। শারীরিক অসুস্থ্যতা কাটিয়ে আবারো দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দীর্ঘ ৪ বছর পর কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকা কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। রাজনীতির মাঠে ২০১৮ সালের পর থেকে কোন কর্মসূচীতে তাকে দেখা যায়নি। তিনি এক প্রকার রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে গেলেও হঠ্যাৎ করে জ্বালানি তেল, পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি ও লোডশেডিং এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সোমবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকা কর্মসূচীতে বিএনপির একাংশের সমাবেশে সোনারগাঁওয়ে কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তিনি কর্মসূচীতে অংশ নেন। রেজাউল করিমের কর্মসূচীতে অংশ নেওয়ার সোনারগাঁওয়ে বিএনপির রাজনীতি মোড় নিতে পারে বলে নেতাকর্মীরা মনে করে। আগামী সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। আর এতে করে ভয়ে কাঁপন ধরে গেছে থানা বিএনপির বিতর্কিত সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের বুকে। রেজাউল করিমকে নিস্ক্রিয় ধরে নিজের একক সাম্রাজ্য বানানোর স্বপ্ন এখন দু:স্বপ্নে পরিনত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় এখানকার ত্যাগী বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রায় প্রতিটি অংগ সংগঠন নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। সোনারগাঁ থানা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলসহ সকল অংগ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের দেখা গেছে রেজাউল করিমের সাথে। পুরনো ছন্দে আবারো তারা সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে ঝড় তোলার অপেক্ষায় আছেন। রেজাউল করিমের পাশে মূলধারার প্রায় সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় শংকিত হয়ে পরেছেন থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান অনুসারিরা। তারা রেজাউল করিমকে ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন বলে জানা গেছে। কারন টাকা দিয়ে আর বিরিয়ানি খাইয়ে লোক ভাড়া করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা যায় কিন্তু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়না বলে মনে করছে সোনারগাঁ বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এদিকে গত কয়েক বছরে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি ও অংগ সংগঠনে একক কতৃত্ব স্থাপনে মরিয়া হয়ে উঠা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ্ইসলাম মান্নানের প্রতি প্রচন্ত ক্ষোভ বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মনে। সোনারগাঁয়ে মান্নান বিরোধী সকল মতকে মাইনাস করে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে দলের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ অনেক নেতাকে তিনি বাদ দিয়ে তার পছন্দ মতো লোকদের দিয়ে কমিটি সাজাচ্ছেন মান্নান। এক্ষেত্রে অনেক বিতর্কিত লোককে তিনি কমিটির নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন। সম্মেলনের নামে আইওয়াশ করে তার নিজের লোকদের দিয়েই কমিটি গঠন করছেন। তার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করেছেন যে মোশারফ হোসেনকে তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। বিগত সময়ে সরকারী দল আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করার অভিেেযাগ রয়েছে মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেও ভোট চেয়েছেন এই মোশারফ। গত এক যুগ সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে দেখা মিলেনি মোশারফের কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে তাকে দেখা যেতো প্রায়শই।
এছাড়াও তার কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি করা হয়েছে নজরুল ইসলাম টিটুকে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে এই টিটুও একজন বিতর্কিত নেতা। তার পরিবারের সবাই স্থানীয় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার ছেলে কাজী লিটু জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলো। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতেও এ ধরনের বিতর্কিত লোকদেরই নেতৃত্ব দিয়েছেন মান্নান।
এমনকি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বেও তার নিজের মন মতো লোক বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের নামেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন মান্নান। গত ১৫ এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের ব্যানারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে মান্নান অনুসারীরা। অথচ সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সহিদুর রহমান স্বপনসহ কমিটির বেশীরভাগ নেতা। মান্নানের গৃহপালিত যুবদল নেতা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ ভূইয়াকে সভাপতি করে আয়োজন করা হয় ইফতার মাহফিলের। সংগঠনের আহবায়ককে না জানিয়ে কমিটির বেশীরভাগ সদস্যকে অনুপস্থিত রেখে সে সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠান আয়োজন পুরোপুরি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। অথচ সকল নিয়ম কানুনকে বুুড়ো আঙ্গুল দেখান মান্নান।
গত ১২ এপ্রিল আয়োজন করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল অথচ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনের আহবায়ক সালাউদ্দিন সালু এবং সদস্য সচিব নাসিরউদ্দিনসহ কমিটির সিংহভাগ নেতা। একটি সংগঠনের আহবায়ক আর সদস্য সচিবকে ছাড়া সে সংগঠনের ব্যানারে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় কিনা সে প্রশ্ন ছিলো সোনারগাঁয়ের সর্বত্র কিন্তুু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে যাওয়া আজহারুল ইসলাম মান্নানের। অনিয়মই যেনো তার কাছে নিয়মে পরিনত হয়েছে।
একইভাবে গত ১১ এপ্রিল আয়োজন করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল য়েখানে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনের আহবায়ক জাকারিয়া। আহবায়ককে না জানিয়েই শুধুমাত্র নিজের লোক দিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন মান্নান। ছাত্রদলের এ আয়োজন নিয়েও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে সোনারগাঁ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বত্র। কিন্তু তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই মান্নানের। তিনি শুধু সোনারগাঁ বিএনপিতে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত রয়েছেন। কোনো নিয়ম কানুনের ধার ধারছেন না।